X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ইএএলজি প্রকল্প

ইউনিয়ন পরিষদের আয় দ্বিগুণ হবে

শাহেদ শফিক
২৯ মার্চ ২০২২, ১৫:০৮আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ১৫:১১

বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েও দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারছিল না সরকার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভোটের হিসাব-নিকাশের কারণেই সরকার এই খাত থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হতো বলে অভিযোগ স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্টদের। অবশেষে আর্থিক সংকটে ভঙ্গুর হয়ে পড়া ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে স্বাবলম্বী করতে ‘উপায়’ পেয়েছে সরকার। নতুন এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রতিটি বিভাগ থেকে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদকে নির্বাচন করা হয়। এই ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কর আদায়ে অবলম্বন করা হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতি। সরকারের কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছে, এতদিন কোনও ইউনিয়ন পরিষদই রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। কোনও কোনও চেয়ারম্যান উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ নাগরিকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তবে এখন রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। নানা কৌশল অবলম্বনের কারণে নাগরিকরা করের আওতায় আসছেন। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে কর নির্ধারণ ও আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ইউএনডিপি, সুইজারল্যান্ড এবং ডেনমার্কের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর আওতায় কর আদায়ের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এজন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে দেশের আটটি বিভাগের ৯টি জেলার পিছিয়ে পড়া ১৮টি উপজেলা পরিষদ ও ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ, চাঁদপুরের একটি, পটুয়াখালীর একটি এবং সিরাজগঞ্জের একটি ইউনিয়নকে এ উদ্যোগের আওতায় আনা হয়।

প্রকল্পের আওতায় চলছে খানা জরিপ

প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহীর বাঘা উপাজেলার গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সরকারের আদর্শ কর তফশীল-২০১৩ অনুযায়ী পদ্ধতিগতভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়। এতে আগের চেয়ে করভুক্ত গৃহের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি গৃহকর বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ। গৃহকর নির্ধারণ ও আদায় সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আরও চারটি ইউনিয়নে এই উদ্যোগ বাস্তাবয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদগুলো হচ্ছে- বাজুবাঘা, গোদাগাড়ী, পাকুরিয়া ও মনিগ্রাম। এরমধ্যে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের কর নির্ধারণের জন্য প্রকল্প হতে অর্থায়ন করা হয়।

প্রকল্পসূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী জেলায় আরও চারটি ইউনিয়ন পরিষদ অনুরূপভাবে নিজ উদ্যোগে গৃহকর নির্ধারণ করেছে। গৃহকর বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ তার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থাপন ব্যয় নির্বাহ করছে। পরিষদগুলোতে এই কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ফলে কর আদায়ে গতি বেড়েছ। তরান্বিত হচ্ছে নাগরিক সেবা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় আদর্শ কর তফশীল-২০১৩ অনুযায়ী গৃহকর নির্ধারণের আগে ২ হাজার ৫৭১টি হোল্ডিং করের আওতায় ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮২৪টি। এই ইউনিয়নে আগে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৪৫০ টাকা।

ইউনিয়ন পরিষদের আয় দ্বিগুণ হবে

গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের করের আওতায় হোল্ডিং সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৭৮টি। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৯০টি। আগে কর নির্ধারিত ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ২৩০ টাকা।

গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮০টি। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬২৬। আর গৃহকর নির্ধারিত ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯৪ হাজার ১৪৪ টাকা। আর গত অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৫ লাখ ২৩০ টাকা।

এছাড়া জেলার বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের গৃহ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫০০টি। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮০টি। গৃহকর নির্ধারিত ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। আর গত অর্থ বছরে আদায় হয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

একই জেলার পাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গৃহ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২০০টি। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩টি। আগে এই পরিষদের হোল্ডিং কর ধার্য ছিল ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। গত অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৭ লাখ টাকা।

রংপুর বিভাগের রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাঠ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ হাজার ৩২৭টি বাড়ি গৃহ করের আওতায় ছিল। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৮৪টি। আর গৃহকর ধার্য ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮১ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৪৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৭ টাকা।

ইউনিয়ন পরিষদের আয় দ্বিগুণ হবে

পটুয়াখালী উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ হাজার ৯০০টি বাড়ি গৃহকরের আওতায় ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩০০টিতে। আগে এই পরিষদের কর ধার্য ছিল ৯ লাখ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ টাকা।

একইভাবে সুনামগঞ্জের জাওয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ২ হাজার ৩০০টি বাড়ি গৃহকরের আওতায় ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৪টিতে। আগে এই পরিষদের কর ধার্য ছিল ৩ লাখ টাকা, বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ টাকা।

এদিকে এই ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে রাজস্ব আদায়ে সফলতা আসায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে রাজস্ব তহবিল ব্যবহার নির্দেশনা পালনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, স্থানীয় সম্পদের ভিত্তিতে গঠিত উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সীমিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল ব্যবহার ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়। বাস্তবতার নিরিখে জারিকৃত উক্ত নীতিমালার কতিপয় ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা ২০২০ জারি করা হয়।

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেরা হাতিয়ার ৮নং সোনাদিয়া ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের কোনও চেয়ারম্যানই ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়নি। এখন নতুন করে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সবাই এলাকার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যাবে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তবে আমি মনে করি রাজস্ব আয় ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হয় না।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেবা পেতে হলে বর্তমানে রাজস্ব পরিশোধের রশিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হলে ওই ইউনিয়ন পরিষদকে পাশের ইউনিয়নের সঙ্গে ট্যাগ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিষয়টি তারা সরকারের উচ্চমহলে জানিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে অনেক ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়টি বাস্তবায়ন করছে। সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পরিষদগুলো স্বয়ংসম্পন্ন হতে পারবে।

গোরগড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রবিউনকে বলেন, ইএএলজি প্রকল্পের আওতায় আমরা ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে গৃহকর আদায়কে শক্তিশালী করছি। এখন আমাদের আদায় অনেক বেড়েছে। প্রতিটি ইউপিতে এটি বাস্তবায়ন করা হলে পরিষদগুলো আরও শক্তিশালী হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারের সবকটি প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংসম্পন্ন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আদর্শ কর তফসিল প্রণয়ন করা হয়েছে। কীভাবে এর বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া অনেক পৌরসভা রয়েছে যারা নিজেদের কর্মীদেরও বেতন দিতে পারছে না। আমি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, যেসব প্রতিষ্ঠান নিজের আয়ে চলতে পারবে না, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হবে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে সরকার
অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের অনাস্থা
ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে: তাজুল ইসলাম
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!