X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কী এমন অপ্রাপ্তি ছিল প্রাপ্তির

রিয়াদ তালুকদার
০২ জুন ২০২২, ১৭:০৫আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১৮:০৯

‘Sending you a long distance hug’। কার্ডের লেখাটা কার জন্য তৈরি করেছিলেন প্রাপ্তি তা জানা যায়নি। তবে এটা যেন তার নিজেরই কথা। দূর থেকে সত্যিই যেন সবাইকে মায়ার চাদরে জড়িয়ে চলে গেলেন প্রাপ্তি।

জাপান গার্ডেনের ১৬ নম্বর বিল্ডিংয়ের ১৬ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বুধবার (১ জুন) বিকালে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাইনা হাবিব প্রাপ্তি। হতাশা থেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

 

‘আত্মহত্যার’ আগে বন্ধুদের যা জানিয়ে গেছেন ঢাবি শিক্ষার্থী প্রাপ্তি

জাপান গার্ডেনে ১৬ তলা থেকে পড়ে ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যু: চিরকুট উদ্ধার

জাপান গার্ডেনের ১৬ তলা ভবন থেকে পড়ে ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যু

 

হাতে বানানো গিফট আইটেম তৈরি করে অল্প সময়েই প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন জায়না হাবিব প্রাপ্তি। ফেসবুকে কারুশৈলী নামের একটি পেইজও ছিল তার। শিল্পকর্ম করে প্রশংসায় ভেসেছেন। তবে চাপা বিষণ্নতা কেউ দেখেনি। নিজের সমস্যাগুলো জানাতেন না কাউকে। বাবা-মাকে ‘খুশি না করতে’ পারার অপূর্ণতাও ছিল মনে। সেটা অবশ্য বলেই গেছেন চিরকুটেই।

 

তবে সেই অপ্রাপ্তির সমাধান হিসেবে প্রাপ্তি যে আত্মহননেই বেছে নেবেন, তা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। পারিবারিক সমস্যার কারণে বিষণ্নতা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন প্রাপ্তি, এমনটা মনে করছে পুলিশও।

প্রাপ্তি নেই, তবে তাকে ঘিরে রয়ে যাবে তার যত সৃষ্টি

ঢাকা সিটি কলেজ থেকে পাস করার পর ঢাবির অ্যাকাউন্টিংয়ে ভর্তি হন প্রাপ্তি। কারুশৈলী পেইজে কাগজের তৈরি বিভিন্ন গিফট কার্ড তৈরি করে বিক্রি করতেন। নিয়মিত ক্রেতা ছিল অনেকে। ২০১৮ থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নিজের পেইজ, আলাদা পরিচয়।

প্রাপ্তির বাবা সরকারি কর্মকর্তা। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের একজন প্রকৌশলী তিনি।

চিরকুটে প্রাপ্তি লিখেছেন, ‘আমার জীবন একটা ব্যর্থ জীবন। না পারলাম বাবা-মাকে খুশি করতে। না অন্য কাউকে। একটা ঘটনা জানার পরও যখন কেউ চুপ করে থাকে তখন সব অর্থহীন মনে হয়। আমি গেলে কিছু আসবে যাবে না, আমি জানি। বিকজ এভরি পারসন ইজ রিপ্লেসেবল। আমরা কাদেরকে ভালোবাসি তারা সেটা জানেন। কে বেশি কষ্ট পাবে সেটাও জানি।’

এরপর ইংরেজিতে প্রাপ্তি যা লিখেছেন তার অনুবাদ দাঁড়ায়, ‘কোনও কিছুরই আর কোনও মানে হয় না। ব্যথা ক্রমে বাড়ে। এখন আপনারাই বলুন, একজন মানুষ কতটা নিতে পারে।’

ঘটনার পর থেকে প্রাপ্তির পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। তাই এখনও জানা যায়নি প্রাপ্তি কেন তার জীবনকে ব্যর্থ বলেছেন, কেনই বা বললেন তিনি বাবা-মাকে খুশি করতে পারেননি।

পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন প্রাপ্তি। ‘তার আত্মহত্যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চাই না কোনও শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিক। তার কী এমন ডিপ্রেশন ছিল যে এই পথ বেছে নিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে তা বের করবে।’

ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মুজিব আহমেদ পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা কোনও অভিযোগ করেনি। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া চিরকুট ও মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। আত্মহত্যার পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

আত্মহত্যা সমাধান নয় উল্লেখ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন আত্মহত্যা করলে আর কোনও ঝামেলাই থাকলো না। কেউ যখন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার মানসিক স্বাস্থ্য-সহায়তার প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য-সহায়তা নিলে কোনও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরানো সম্ভব। পরিবার, সমাজ বা প্রিয়জনদের কাছ থেকে সবসময় প্রত্যাশিত আচরণ পাওয়া যায় না। আমাদের জীবনে প্রেশার থাকবেই। প্রত্যাশার বাইরে অনেক ঘটনা ঘটবে। দুঃখ-কষ্ট থাকবে। আবার আনন্দও থাকবে। কাজেই ব্যাপারগুলো ঠিকমতো সামলে নেওয়ার মানসিক শক্তি থাকতে হবে। পরিবারের এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
খিলগাঁওয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ
স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে প্রাণ দিলেন পার্লারের মালিক
অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার ২ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলার রায় আবার পেছালো
সর্বশেষ খবর
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশ্ব যকৃৎ দিবসফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!