আসন্ন ঈদুল আজহায় গ্রামে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য ঢাকা ছাড়বেন লাখো মানুষ। আর এই যাত্রা কিছুটা স্বস্তির করতে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের কেউ কেউ দুই দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করছেন কাঙ্ক্ষিত ‘সোনার হরিণ’ ট্রেনের টিকিট। এই ‘টিকিটযুদ্ধে’ নেমেছেন নারীরাও।
সোমবার (৪ জুলাই) সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য টিকিট প্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যহারে নারীরাও টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ সফলও হয়েছেন এই যুদ্ধে। তাদের মধ্যেই একজন নাটোরের লিমা।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গতকাল রবিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে স্টেশনে অপেক্ষা করছেন টিকিটের জন্য। দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে তিনি পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে টিকিট পেয়েছেন।
একই লাইনে টিকিটের জন্য গতকাল দুপুর ১২টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন সাবিনা নামে আরও একজন। তিনি ১০টার কিছুক্ষণ পরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়েছেন। বললেন, ‘আমি প্রায় ২২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ৪টা টিকিট পেয়েছি। সারারাত স্টেশনেই ছিলাম। কষ্ট সার্থক হয়েছে।’
পুরুষের তুলনায় নারী টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা কম হলেও টিকিটের তুলনায় অনেক বেশি। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের বেশিরভাগই গতকাল দুপুরের আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন। নারীদের জন্য মাত্র একটি টিকিট কাউন্টার রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের একজন মেরিনা লতিফ। ৫৫ বছর বয়সী এই নারী পরিবার নিয়ে যাবেন দিনাজপুরে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আজ সকাল ১০টার দিকে তিনি এখনও ৩০-৩৫ জনের পেছনে।
তিনি বলেন, ‘এতগুলো নারী এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন, আর তাদের জন্য মাত্র একটি কাউন্টার। এজন্যই এত ভোগান্তি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটং পার্টনার সহজ সিনেসিস ভিনসেন জেভি এর ম্যানেজার পাবলিক রিলেশন ফরহাদ আহম্মেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় টিকিটের পরিমাণ খুবই কম। আমরা যতটুকু পারছি নারীদের টিকিট দিচ্ছি। '
দীর্ঘসময় নারী যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে তাদের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে বলতে পারবে।
টিকিট প্রত্যাশীরা বলছেন, সড়কপথের যানজট এড়াতে ও তুলনা নিরাপদের ভ্রমণের জন্যই তারা ট্রেনযাত্রায় আগ্রহী অধিকাংশ টিকিট প্রত্যাশী। যাত্রাপথের ভোগান্তি এড়াতে এজন্য ট্রেনের আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন তারা।
শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১ জুলাই দেওয়া হয় রেলের ৫ জুলাই এর ট্রেনের টিকিট, ২ জুলাই দেওয়া হয় ৬ জুলাইয়ের টিকিট, গতকাল ৩ জুলাই দেওয়া হয় ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং আজ সোমবার (৪ জুলাই) দেওয়া হচ্ছে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
আগামীকাল ৫ জুলাই দেওয়া হবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৭ জুলাই থেকে। ওই দিন ১১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। ৮ জুলাই ১২ জুলাইয়ের টিকিট, ৯ জুলাইয়ের ১৩ জুলাইয়ের টিকিট, ১১ জুলাই ১৪ এবং ১৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ১০ জুলাই ঈদ হলে ১১ জুলাই সীমিত কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। তবে ১২ জুলাই থেকে সব ট্রেন চলাচল করবে।
ঢাকায় ছয়টি স্টেশন এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর শহরতলী প্লাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।
এ ছাড়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে পাওয়া যাবে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ের ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে।