X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে লাগেজ ‘লেফট-বিহাইন্ড’, প্রবাসীদের ঈদ মাটি

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৭ জুলাই ২০২২, ১০:০০আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ১৫:২৯

শারমিন আক্তার ২৪ জুন লন্ডন থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ওঠেন। সঙ্গে নিজের জামা কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ একটি লাগেজ। লন্ডন থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ঢাকায় এসে শারমিন জানতে পারলেন তার লাগেজ আনেনি এয়ারলাইন।  কাতার এয়ারওয়েজের কর্মীরা ২/১ দিনের মধ্যে লাগেজ এনে দেওয়ার কথা বললেও ১২ দিনেও লাগেজ পাননি শারিমন। তার মতো প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীকে এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে দেশে আসছেন প্রবাসীরা, কিন্তু নিজের ও প্রিয়জনদের জন্য আনা জিনিসপত্রের লাগেজ না পেয়ে ঈদ মাটি হতে যাচ্ছে তাদের।

সাধারণত বাজেট (লো কস্ট ক্যারিয়ার) এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি  ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড হয়। তবে বর্তমানে শুধু বাজেট এয়ারলাইন নয়, সব এয়ারলাইনের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেড়েছ মাত্রা অতিরিক্ত। এরমধ্যে  জাজিরা এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স,  এমিরেটস, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই, এয়ার অ্যারাবিয়া, ওমান এয়ার, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেশি হচ্ছে।

প্রবাসী মোহাম্মদ স্বপন ২৮ জুন সালাম এয়ারের ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন।  সালাম এয়ারের ফ্লাইট ঢাকায় বিমানবন্দরে নামানোর কথা থাকলেও তারা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামিয়ে দেয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে লাগেজের জন্য ৪ ঘন্টা অপেক্ষার পর মোহাম্মদ স্বপন জানতে পারলেন তার লাগেজ আসেনি।

মোহাম্মদ স্বপন বলেন, আমার ২টি লাগেজ ছিল। আমিসহ একই ফ্লাইটের আরও ১০ জন যাত্রী লাগেজ পাননি। আমাদের বলা হলো দুই তিন দিনের মধ্যে লাগেজ এলে সালাম এয়ার বাড়িতে পৌঁছে দেবে। কিন্তু এখনও লাগেজ পাইনি। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য কিছু জিনিসপত্র আনলাম। সেটা তো দূরে থাকা, নিজের পরার মতো জামা কাপড়ও নেই।

ঈদের ছুটিতে আসা প্রবাসীরা  লাগেজ না পেয়ে বিপত্তির মধ্যে পড়েছেন। পরিবারের জন্য আনা উপহার ছাড়া অনেকেই ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া জটিলতার মধ্যে পড়ছেন।

লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড কেন হয়?

এভিয়েশন খাতের পরিভাষায় ‘লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড’ মানে হচ্ছে—একটি ফ্লাইটে যাত্রী তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছালেও লাগেজগুলো ওই ফ্লাইটে আসেনি।  একটি উড়োজাহাজ  আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে ভার বহনের সক্ষমতা নির্ধারিত। খালি উড়োজাহাজের ওজন, যাত্রীদের ওজন, যাত্রীদের লাগেজের ওজন, উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের ওজন সব সমন্বয় করে আকাশে ওড়ার জন্য নির্ধারিত ওজন ঠিক রেখে ফ্লাইটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

কখনও কখনও ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গেলে এয়ারলাইনগুলো লাগেজ কমিয়ে ওজন সমন্বয় করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। পরবর্তী ফ্লাইটে লাগেজ নিয়ে এসে যাত্রীদের দেওয়া হয়। এছাড়া কারিগরি ত্রুটি, মিস হ্যান্ডলিং, ভুল ট্যাগিং, ট্রানজিটে যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীর লোড ফ্যাক্টর ম্যানেজ করতে স্বেচ্ছায় লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড করে  এয়ারলাইনগুলো।

বেড়েছে লাগেজ ‘লেফট-বিহাইন্ড’, প্রবাসীদের ঈদ মাটি

কৌশলে দিচ্ছে না ক্ষতিপূরণ

কোনও যাত্রীর লাগেজ যাত্রা শুরুর বিমানবন্দরে থেকেই পাঠানো না হলে আগে থেকেই গন্তব্যের বিমানবন্দরে এয়ারলাইনের কর্মীরা জানতে পারেন। আগে ভাগে জানলেও ঢাকায় কোনও এয়ারলাইনই যাত্রীদের এ বিষয়ে কোনও সহযোগিতা করে না।

২৭ জুন মাস্কাট থেকে  ওমান এয়ারের ফ্লাইটে ঢাকায় আসার পর লাগেজ বেল্টে ঘন্টাখানেক নিজের লাগেজ না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান প্রবাসী মাসুদ। অথচ তার লাগেজটি মাস্কাট থেকেই আসেনি।  এক ঘন্টারও বেশি সময় পর  কয়েক জন লাগেজ না পেয়ে বিমানবন্দরে  স্টাফদের খুঁজছেন, তখন বেল্টে আসেন  ওমান এয়ারওয়েজের অফিসার। তাদের জানানো হয়, লাগেজ ওমান থেকে আসেনি, আসলে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই কর্মকর্তা যাত্রীদের নাম ফোন নম্বর নিয়ে যান। অথচ আগে থেকেই কোন কোন যাত্রীর লাগেজ আসবে না, তা জানতেন ওমান এয়ারের কর্মীরা। তারা সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের আগেই জানিয়ে দিলে ঘন্টা খানেক লাগেজ খুঁজে উদ্বিগ্ন হতে হতো না।

হয়রানির এখানেই শেষ নয়, যাত্রীদের নিজেদের ফোন নাম্বার দিলেও কোন এয়ারলাইন যাত্রী বিমানবন্দর থেকে চলে যাওয়ার পর রেসপন্স করে না ঠিক মতো।

মাসুদ বলেন, শুধু আমার নয়  একই ফ্লাইটের আরও প্রায় কয়েকজন লাগেজ পাননি। আমার লাগেজটিতে আমার বন্ধুদের মালামাল ছিল। তাদের মালামালগুলো দিতে না পারায় আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। ৩-৪ দিন সালাম এয়ারের ফোন দিয়েও কোন রেসপন্স পাচ্ছি না।

কোনও যাত্রী  গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তার লাগেজ না পেলে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে গিয়ে লাগেজ হারানোর বিষয়ে ‘প্রপার্টি ইরেগুলারিটি রিপোর্ট’ (পিআইআর) করতে হয়। পিআইআর করা হলে যাত্রীর লাগেজ কোথায় আছে তা ট্রেকিং করা যায়।  অন্যদিকে লাগেজ না পাওয়ার কারণে যাত্রীকে সাময়িক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। পিআইআর করার ২১ দিনের মধ্যে লাগেজ না দিতে পারলে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের আওতায় বিমানবন্দরগুলোর হারানো সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগ পরিচালনা করছে বিমান। লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের কর্মীরা যাত্রীদের লাগেজ হারানোর বিষয়ে প্রপার্টি ইরেগুলারিটি রিপোর্ট নিচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছে বিশেষ সুবিধা নিয়ে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের কর্মীরা যাত্রীদের রিপোর্ট নিচ্ছে না। তারা  যাত্রীদের  লাগেজ  আসেনি বলে কখনও  এয়ারলাইনের অফিসে বা কোনও এয়ারলাইনের ফোন নাম্বার দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছে। যথাযথা প্রক্রিয়া যাত্রী পিআইআর করতে না পারায় ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নীরব দর্শক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ

২০১৮ সালের আগে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো যাত্রীদের  লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড করতো মাত্রাতিরিক্ত হারে।  একই ফ্লাইট ৫০ জনের বেশি যাত্রীর লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সে সময়ে যাত্রীকেই বিমানবন্দরে এসে খোঁজ নিতে হতো, লাগেজ নিতে বিমানবন্দরে আসতে হতো।

সে সময়ে লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বন্ধে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানালেও আমলে নেয়নি এয়ারলাইনগুলো। পরবর্তীতে বিমানবন্দরের  ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন ও  মুহাম্মদ ইউসুফ কয়েকটি  এয়ারলাইনকে জরিমানা করেন। একই যাত্রীদের লেফট-বিহাইন্ড লাগেজের জন্য সাময়িক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেন এয়ারলাইনগুলোকে। নিয়ম করা হয় লেফট-বিহাইন্ড লাগেজে যাত্রীর বাড়িতে কুরিয়ার করে পৌঁছে দেবে এয়ারলাইন।

সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রীদের  লাগেজ লেফট-বিহাইন্ডের পরিমাণ বাড়লেও কোন  এয়ারলাইনকে জরিমানার গুনতে হয়নি, যাত্রীকেও দিতে  হচ্ছে না ক্ষতিপূরণ।

এ বছরে মার্চ মাসের শেষের দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের  নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।  যাত্রীদের  লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার যাত্রী বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। যাত্রীদের লাগেজ সংক্রান্ত সব ধরণের সমস্যা দূর করতে আমরা কাজ করছি।

/এমআর/
সম্পর্কিত
ইসরায়েল থেকে ফ্লাইট আসার ব্যাখ্যা দিলো বেবিচক
ঈদের দিনে ইসরায়েল থেকে ঢাকায় ফ্লাইট এলো কেন?
তৃতীয় টার্মিনাল বুঝে নিতে অপেক্ষা করতে হবে ছয় মাস
সর্বশেষ খবর
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন