X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সীতাকুণ্ডের অগ্নিদগ্ধরা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষত

মাহফুজ সাদি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:৫৯আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:১৩

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বি এম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া আহত ব্যক্তিরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। এই ক্ষত শরীরিকের পাশাপাশি মানসিকভাবেও। চিকিৎসা চলমান থাকায় অনেকেই কাজে ফিরতে পারেননি। পরিবারের সদস্যরা অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ার বিষয়টি ক্ষতের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছে তাদের।

রবিবার (২৫ সেপ্টম্বর) অন্তত হাফ ডজন অগ্নিদগ্ধ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বলা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কারও শরীরের ক্ষত শুকিয়ে গেছে, কারও ক্ষত এখনো শুকায়নি। এ ছাড়া যাদের চোখ আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই এখনো ভুগছেন। নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক দগ্ধকে। উপার্জন না থাকলেও চিকিৎসার জন্য খরচ করতে হচ্ছে।

দগ্ধ নজরুল ইসলাম মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দগ্ধ স্থানের ক্ষত প্রথমে শুকিয়ে গেলেও পরে ইনফেকশন হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে ক্ষত স্থানে আবার ব্যান্ডেজ করতে হয়েছে। ১৫ দিন পরে ব্যান্ডেজ খোলার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চোখের সমস্যাও এখনো কাটেনি। তিন মাসের জন্য ড্রোপ দেওয়া হয়েছে। ফলে কাজে ফিরতে পারছে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ায় অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের।

আরেক দগ্ধ সুমন হাওলাদার বলেন, তার ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। অণ্ডকোষ আক্রান্ত হওয়ায় কিছুদিন পর পর বসা থেকে দাঁড়ালে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। দাম্পত্য জীবনেও সমস্যা হচ্ছে। এক চোখে দেখতে পেলেও আরেক চোখ সাদা হয়ে গেছে। ছানির মতো সাদা পর্দা পড়েছে মনে হচ্ছে। চট্টগ্রামে তিন-চারবার চোখের চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা ভালো বুঝলেও টাকার অভাবে যেতে পারছেন না। হাঁটাচলা করলে, আলোতে গেলে কিংবা পানি লাগালে চোখ ফুলে উঠছে, জ্বালাযন্ত্রণা করছে। এ কারণে কাজেও ফিরতে পারছেন না।

দগ্ধ বদরুজ্জামান রুবেল বলেন, শরীরের ক্ষত শুকালেও দাগ এখনো রয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন চোখ নিয়ে। দুটি চোখের মণিতেই সমস্যা রয়েছে। অচল হয়েছে পড়েছেন তিনি। চশমা দিয়েও দেখতে পাচ্ছেন না, ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। ফলে কোনও ধরনের কাজে ফিরতে পারেননি। এমনকি আর কখনো কাজে ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।

নজরুল, সুমন ও রুবেলের মতো অগ্নিদগ্ধ আরও বেশ কয়েকজন জানান, তাদের শরীরের ক্ষত এখনো রয়েছে গেছে। পোড়া দাগ হয়তো কখনো মুছে যাবে না। তা ছাড়া চোখেও সমস্যা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। ধারকর্জ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন তারা। সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (২৫ সেপ্টম্বর) ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘শরীরের ক্ষত এতদিনে থাকার কথা নয়। কারও ইনফেকশন হলে সেটি ভিন্ন বিষয়। তারা বার্ন ইনিস্টিটিউটেও চিকিৎসা নিতে পারে আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজেও যেতে পারে। আর অণ্ডকোষ ও চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা আগেই বলেছি, দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফলোআপ চিকিৎসার পরামর্শও দিয়েছি আমরা।’

এর আগে ৭ জুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখে চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেছিলেন, কেমিক্যাল ইনজুরির কারণে আহত ব্যক্তিদের চোখে সমস্যা হয়েছে। পরদিন ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেওয়া ১৯ জনের ১৫ জনের বেশি রোগীর চোখের সমস্যা দেখা গেছে।

চোখের সমস্যার বিষয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. আবুল কালাম বলেন, ‘আগুনে কেমিক্যাল বিস্ফোরিত হলে তা পুড়ে হাইপ্রেসার জোন তৈরি হয়। একটা পার্টিকুলার প্রেসারে চোখ অ্যাডাপ্টেড থাকে। হাইপ্রেসার জোন তৈরি হয়ে চোখে প্রেসার পড়ে ড্যামেজ হয়েছে।’

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বি এম কনটেইনার ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন (অব.) মাইনুল আহসান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ডিসি অফিস থেকে যে লিস্ট দেওয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে (ডিএনএ জটিলতার তিন জন ছাড়া) ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কতজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, সেটি আমি বলতে পারবো না। তবে সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ কোটি ৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে ব্যয় হয়েছে। ২০০-এর বেশি দাবি এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নন। তবে প্রকৃত কোনও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন, সেটি আমরা দেখবো।’

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বি এম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫১ জনের লাশ উদ্ধার এবং দুই শতাধিক দগ্ধ ও আহত হওয়ার কথা জানানো হয়। আহতদের চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬৩ জনের চোখ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হতে পারে বলেও জানানো হয়। একটি ঘটনায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষের চোখ আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ১ বছর, এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন সুলতান মাহমুদ
বিএম ডিপো বিস্ফোরণে নেই কারও দায়: ছেলের জন্য এখনও কাঁদেন স্কুলশিক্ষক বাবা
বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণমালিকপক্ষের অবহেলা পেয়েছে ৬ সংস্থা, কিছুই পায়নি ডিবি
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ