জাহাজভাঙা শিল্পে ১৮ বছরের নিচে শ্রমিক নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিতল পাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া প্রতিটি জাহাজ থেকে কী পরিমাণ পিতল সংগ্রহ করা হয়, তা নিরূপণ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালককে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর জাহাজভাঙা শিল্পের পিতল পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একই সঙ্গে রিটে প্রতিটি জাহাজ থেকে প্রাপ্ত পিতলের পরিমাণ নিবন্ধন, জাহাজভাঙা শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বাধ্যতামূলক না পলিসি গ্রহণ, জাহাজভাঙা শিল্প কারখানায় ১৮ বছরের নিচের কোনও ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান না করা এবং শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইভ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির রিটটি করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ট্রেড এবং ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পিতলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে দামি আসবাব, বাথরুম ফিটিংস তথা দৈনন্দিন ব্যবহার্য অনেক সামগ্রী। পিতলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব পিতলের একটি বড় অংশের জোগান আসে আন্তর্জাতিক দরপত্রে কেনা বিভিন্ন জাহাজ থেকে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে সংগৃহীত পিতল থেকে। বাকিটা সংগৃহীত হয় স্থানীয়ভাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পিতলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব পিতল পাচার হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পিতলনির্ভর কারখানাগুলোকে বেশি দামে ভারত এবং অন্য দেশ থেকে পিতল আমদানি করতে হয়। ফলে দেশে পিতলসামগ্রীর দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে পিতলনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী পিতল পাচারের একটি সিন্ডিকেট নিজেরা লাভবান হয়ে পিতল পাচার করে দেশের ক্ষতি করছে, যা বেআইনি এবং কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুযায়ী, দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে অবশ্যই জনস্বার্থ রক্ষায় পিতল পাচার বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোয় শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয়, যা আইনসংগত নয়। জাহাজভাঙা শিল্প-কারখানায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং নিরাপত্তাসামগ্রীর অভাবে প্রতিবছর বহুসংখ্যক শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হন। এর তেমন কোনও প্রতিকার নেই। আইনে সুস্পষ্টভাবে বাধ্যতামূলক শ্রমিকদের জন্য বিমা করার বিধান থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না।