X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ বিনামূল্যে পেয়েছে ১১০৭৯ রোগী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ নভেম্বর ২০২২, ২০:৩৫আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ২০:৩৫

‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগান নিয়ে করোনাকালে বিনামূল্যে শুরু হওয়া ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ এখনও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও অন্য রোগীদেরও অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছে সংগঠনটি। এখন করোনা রোগী কম, তাই অন্য রোগীদের সেবা দেওয়ার হার বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৯ রোগীকে সেবা দিয়েছে তারা।

জানা গেছে, এখন যেসব রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, গর্ভবতী নারী, শীতে শ্বাসকষ্টে ভোগা বয়স্ক রোগী, পোস্ট-কোভিডে আক্রান্ত রোগী এবং অক্সিজেনের সাহায্যে বেঁচে থাকা বয়স্ক রোগী। এসব রোগীর পক্ষ থেকে সহায়তা চাইলেই অক্সিনেজ সিলিন্ডার নিয়ে পৌঁছে যান স্বেচ্ছাসেবকরা।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্তের কথা জানানো হলে শোরগোল পড়ে যায়। পরে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে, দীর্ঘ হতে থাকে মৃত্যুর মিছিলও। নতুন ধরনের এই সংক্রমণ নিয়ে সর্বত্র অজানা আতঙ্ক আর সীমাহীন ভয় দানা বাঁধে। অক্সিজেনের অভাবে নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মৃত্যুর খবর আসছিল, এমন সময় ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগান দিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন দিতে গঠিত হয় ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’।

২০২০ সালের ২৫ জুন যাত্রা শুরু করেন ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র প্রধান উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার সঙ্গে আরও আছেন ছাত্রলীগের উপবিজ্ঞান সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সবুর খান কলিন্স এবং ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।

অক্সিজেন সেবা নিচ্ছেন এক রোগী

উদ্যোগটি ব্যাপক আলোচিত হলেও কতটা স্থায়িত্ব পায়, তা নিয়ে শঙ্কার কথাও সামনে আসে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ কমে আসার পরও হারিয়ে যায়নি সেবা সংগঠনটি। বরং প্রায় আড়াই বছর ধরে একইভাবে সক্রিয় আছে। ভবিষ্যতে সেবা বন্ধ হওয়ার কোনও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগটি শুরু করার পর নানা কথা বলা হলেও তাতে আমরা কান দিইনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে গেছি আমরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও সেবাটি বন্ধ করে দেওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। উল্টো আরও ব্যাপকতা দেওয়া বা বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এর সঙ্গে কেবল আমি একা নই, আমার সহযোদ্ধারাও সমান্তরালে রয়েছেন। আমরা সবাই মিলে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৯ জন রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং যশোর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় এই সেবা দেওয়া হয়েছে।

সাদ বিন কাদের চৌধুরী আরও বলেন, ‘করোনার সময় যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি, সেসব জেলায় অক্সিজেন সেবা চালুর চেষ্টা করা হয়। সে ক্ষেত্রে যেসব জেলায় সংক্রমণ কমে গেছে, সেসব জেলা থেকে আমরা অধিক সংক্রমিত জেলায় সেবা স্থানান্তর করি। যেসব জেলা শহরে সরাসরি সেবা নেই, সেখানে কুরিয়ারযোগে বা ওই জেলা কোনও অ্যাম্বুলেন্স গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে সেবা দেওয়া হয়।’

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সেবা শুরু হয়, যা বর্তমানে ২১০টি সিলিন্ডারে উন্নীত হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করতে ১৬০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এর মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে অন্তত ২২ জন স্বেচ্ছাসেবক করোনায় আক্রান্ত হন। যার মধ্যে সাদের পুরো পরিবারও রয়েছে।

অক্সিজেন সেবা নিচ্ছেন এক রোগী

‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা চালু করি বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’, বলছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

সাদ বিন কাদের আরও বলেন, ‘সেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সেবার জন্য কোনও যাতায়াত ভাড়া নেই। এমনকি কোন জামানতও জমা দিতে হয় না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি আমরা মানুষের বাসায় পৌঁছে দিই। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব।’

জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা এই পর্যায়ে আসার পেছনে সাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা রয়েছে। আর্থিক লেনদেন নয়, বরং কেউ পণ্য দিলে গ্রহণ করা হয়। কেউ অক্সিজেন রিফিলে সহযোগিতা করতে চাইলে রিফিল সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। স্বচ্ছতার জন্য প্রতি মাসে সেবার সামগ্রিক বিবরণী ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়।

/এমআরএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
আরও ১৩ জনের করোনা শনাক্ত
চট্টগ্রামে করোনায় আরও ৫ জন আক্রান্ত
চট্টগ্রামে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
রাকসু নির্বাচনের তফসিলসহ ৯ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রাকসু নির্বাচনের তফসিলসহ ৯ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জাতীয় ঐকমত্য গঠনে শতভাগ একমত হওয়া প্রায় অসম্ভব: তাহের
জাতীয় ঐকমত্য গঠনে শতভাগ একমত হওয়া প্রায় অসম্ভব: তাহের
মুরাদনগরের ঘটনায় জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মুরাদনগরের ঘটনায় জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মজুত থাকার পরও দিনভর পাম্পে অকটেন সংকট!
মজুত থাকার পরও দিনভর পাম্পে অকটেন সংকট!
সর্বাধিক পঠিত
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ উপপরিচালকের‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব