X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তাদের অভিমত

মজুরি চুরি বন্ধ না হলে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ সম্ভব নয়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৮আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:২২

রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের উন্নয়নের প্রধান কারিগর। তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অথচ তাদের আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছি না। প্রবাসীরা শ্রমিকদের পাওনা মজুরি চুরি বন্ধ করা না গেলে, তাদের কল্যাণ সম্ভব নয়। মজুরি চুরি শুধু অভিবাসী কর্মীদেরই নয়, তাদের পরিবার এবং মূল দেশগুলোর অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে দৈনিক বণিক বার্তার উদ্যোগে ‘মজুরি চুরি বিষয়ে অভিবাসী শ্রমিকদের গণসাক্ষ্য’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের উন্নয়নের প্রধান কারিগর। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ এবং বিশ্বে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রবাসীরা দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তা মোট রফতানি আয়েরও অর্ধেক। অথচ তাদের আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছি না। আমি সরকারকে বলবো তাদের সমস্যাগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপনের একটি দিন, অভিবাসী শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতির দিন। যখন আমরা আজ অভিবাসী কর্মীদের উদযাপন করি, তখন আমরা এটাও স্বীকার করি যে এই দিনটি অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মজুরি চুরির সমস্যাগুলো সমাধানে ক্ষতিপূরণ, পুনর্মিলন এবং জবাবদিহির দিন হওয়া উচিত। আমি মনে করি অভিবাসী শ্রমিকদের চারটি সমস্যা- প্রথমে বিদেশে যাওয়া নিয়ে সমস্যা, দ্বিতীয়ত মজুরি চুরি বা ঘাটতি, তৃতীয়ত মজুরি দাসত্ব, চতুর্থ হলো সমস্যার প্রতিকারের ঘাটতি। এই সমস্যাগুলো যতদিন সমাধান না হবে ততদিন প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ হবে না।’

অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিভিউ ফোরাম দ্বারা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাঁচটি দেশে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মজুরি চুরির ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করে গণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই হাজার কর্মী থেকে সামান্য মজুরি চুরি হয়েছে ১৯ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবেদনে শুধু বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও ফিলিপাইনের নেটওয়ার্ক সদস্য এবং অংশীদারদের ডকুমেন্টেশন কভার করা হয়েছে। এটি অভিবাসীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ, যারা মজুরি চুরির শিকার। অভিবাসী শ্রমিকরা প্রতিকার পেতে অক্ষম হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রিপোর্ট করা হয়নি।’

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার। তিনি বলেন, ‘মজুরি চুরির ঘটনা শুধু কয়েকটি সূচকে সীমাবদ্ধ নয়। বিমা, রক্ষা, প্রশিক্ষণের অজুহাতে মজুরি থেকে কর্তনও সাধারণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু গ্রহীতা দেশগুলোতে পৌঁছানোর পর চুক্তিপত্রের দ্বিতীয় সেটে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। বেশিরভাগ শ্রমিকই এসব চুক্তির ভাষা বুঝতে পারেন না। এই নতুন চুক্তি অনুসারে তাদের আগের চুক্তির চেয়ে কম বেতন দেওয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়। শ্রমিকদের জরিমানা আরোপের আড়ালে মজুরি কর্তনও প্রচলিত ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রে খাবারের মান এবং বাসস্থানের মান তাদের মজুরি থেকে কাটা পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসবই মজুরি চুরির অংশ।’

তিনি বলেন, মজুরি শোষণের একটি প্রধান রূপ দেখা যায় ওভারটাইম ছাড়াই গৃহকর্মীদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করানোর মাধ্যমে। এমনকি নিয়োগ কর্তাদের আত্মীয় বা বন্ধুর জন্যও তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলেও তাদের বেসিক বেতন বা সুযোগ-সুবিধা বাড়ে না। চুক্তি শেষে নগণ্য কিছু সুবিধাই শুধু তারা পান। এমন ঘটনাও ব্যাপকভাবে দেখা যায়, যেখানে নিয়োগ কর্তারা শ্রমিক সংগ্রহের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন তা তাদের মজুরি থেকে অবৈধভাবে কেটে নেন। এই পরিমাণটি একজন শ্রমিকের তিন থেকে চার মাসের মজুরির সমান হতে পারে।

অভিবাসী শ্রমিকরা মৃত্যুর পরেও তাদের মজুরি এবং প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নেওয়া থেকে রেহাই পান না মন্তব্য করে সি আর আবরার বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবিগুলো প্রায়ই সত্য থেকে দূরে থাকে। ‘স্বাভাবিক’ শব্দটির ব্যবহার নিয়োগ কর্তাদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও অন্যান্য দায়িত্বের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান থেকে দায়মুক্তি দেয়। সেই সঙ্গে মৃত অভিবাসীদের পরিবারের দাবি ও অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ খুব কম থাকে। এ ধরনের অভিযোগ দায়ের করতে যে বিশাল আইনি খরচ রয়েছে, সেটি তাদের ঢাল হিসেবে কাজ করে। ক্ষতিপূরণের ওপর কর আরোপ করা শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জন্য মজুরি চুরির আরেকটি রূপ।

/জেডএ/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
সর্বশেষ খবর
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া