X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

তেজগাঁও বস্তির আগুনে পুড়লো অর্ধশত মানুষের স্বপ্ন

কবির হোসেন
১৪ মার্চ ২০২৩, ২৩:৩১আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২৩:৩২

ফরিদা বেগম (৫৫) ৫০ বছর আগে স্বামী রুবেলকে নিয়ে সংসার পেতেছিলেন তেজগাঁওয়ের রোলিং মিল বস্তি এলাকায়। ওইসময় জায়গাটি নিচু ঝিলের মতো ছিল। ধীরে ধীরে এটি ইট-কনক্রিটের নগরে রূপ নেয়। সেখানেই ৬ বছর আগে স্বামী রুবেল মারা যায়। একমাত্র ছেলে রোমান ও চার মেয়েকে নিয়ে ফরিদা বসবাস করে আসছেন ওই বস্তিতেই। সেখানে থেকেই দুই মেয়ে রোজি ও রুবিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রোমান ট্রাকের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজে কখনও বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, পরে খণ্ডকালীন ব্যবসা শুরু করেন। ছেলে-মেয়েদের না জানিয়ে শীতকালে ফুটপাতে পিঠার ব্যবসা করে কিছু অর্থকড়িও জমিয়ে ছিলেন ফরিদা।

গতকালের আগুনে দীর্ঘদিনের জমানো ওই টাকা আর ঘরে থাকা সকল আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

‘আমার সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দুই মেয়ে রুমা ও ইতি সঙ্গে থাকে। তাদের এখনও বিয়ে দিতে পারিনি। আমার ছেলের আলাদা সংসার। আমি কাজ করে কোনরকমে দুই মেয়েকে নিয়ে চলি। এখন কোথায় যাবো আমি?’—আগুনে সব হারিয়ে ধ্বংস্তূপের পাশে বসেই হাউমাউ করে বিলাপ করছিলেন ফরিদা বেগম। তেজগাঁও বস্তির আগুনে পুড়লো অর্ধশত মানুষের স্বপ্ন

শিউলি আক্তার (২৫)। স্বামী লিটন পেশায় রিকশাচালক। আরিয়ান (৮) ও রায়হান (৪) নামে দুই ছেলে তার। গত তিন বছর ধরে ওই বস্তির একটি কক্ষে ভাড়ায় বসবাস করে আসছেন। ফরিদা বেগমের মতোই আগুনে সব হারিয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তিনিও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।  তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রথমে আগুন ধরেছে আমাদের পাশের বাড়িতে। আগুন লাগার কথা শুনতে পেয়ে আমি দ্রুত দুই ছেলেকে নিয়ে নিচে নেমে আসি। আধা ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বাড়িতেও আগুন চলে আসে। আমার ফ্রিজ, খাট—যা যা ছিল সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এরপর থেকে রাস্তায় বসে আছি।

বস্তিতে হালিমা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় একটি ভাড়া করা কক্ষে স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন মিনা বেগম (৪০)। হাতিরঝিল এলাকার পাশেই একটি কারখানার কাজ করতেন। কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথেই তার কাছে খবর আসে আগুন ধরার। এসে দেখেন নিজের কক্ষটা আগুনে জ্বলছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এভাবে সব পুড়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার ঘরে অফিসের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিল। একটা ঘরে যা যা ফার্নিচার থাকার সব ছিল। সব আগুনে কয়লা হয়ে গেছে।

ওই বস্তির আক্কাসের বাড়ির তিন তলায় গত ১২ বছর ধরে দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন সালমা বেগম। মেয়ে মুন্নি এবং সোনিয়া গার্মেন্টস চাকরি করেন। স্বামী রফিকুলও বস্তির পাশেই লাকড়ির ব্যবসা করেন। দুই মেয়েরও কাজ শেষে অফিস থেকে ঘরে ফেরার সময় হয়েছিল। মা সালমা প্রতিদিনের মতো তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় চারদিক থেকে শব্দ—আগুন আগুন।  সঙ্গে সঙ্গে সেও নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। তবে নিজে নিরাপদে যেতে পারলেও তার ঘরের কোনও কিছুই আগুন থেকে রেহাই পায়নি। ঘরের সব কিছু আগুনে জ্বলেছে। তিনি বলেন, কীভাবে এতো বড় আগুন লাগলো আমরা বুঝতে পারছি না। দুপুর পর্যন্ত ধোঁয়াই উড়েছে। আমাদের সব শেষ। সকাল থেকে রাস্তাতেই বসে আছি। একজন কয়েক কেজি চাল দিয়েছেন—এছাড়া আর কিছু পাইনি।

তাদের মতো সুফিয়া বেগম, তারা বেগম, পারুল আক্তার, হাসিনা, মুমেনা বেগম, লিজা আক্তারসহ আরও অর্ধশতাধিক মানুষের ঘর ওই আগুনে পুড়েছে।

যেখানে গতকাল বিকালেও ছিল শিশুদের হই হুল্লোড়, বাসিন্দাদের প্রাণচাঞ্চল্য, সারাদিনের কাজ শেষ গায়েখাটা মানুষগুলোর ছিল ঘরে ফেরার তাড়া। ঠিক সেই সময়ে দাউদাউ করে আগুন ধরে যায় বস্তিটিতে। ওই বস্তির হালিমার তিনতলা টিনশেড বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়ে মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতে।

সোমবার (১৩ মার্চ) রাত ৮টায় আগুনে ধরে টানা দুই ঘণ্টা জ্বলে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকালে তেজগাঁওয়ের ওই বস্তিতে গেলে দেখা যায়—ঘরহারা পরিবারগুলো পাশের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,  তেজগাঁও তেজকুনিপাড়া এলাকার রোলিং মিল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় অর্ধশতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আশপাশ থেকে পানির ব্যবস্থা করতে না পারা ও গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। বস্তিতে চারতলা পর্যন্ত বাঁশ, কাঠ ও টিনের ঘর হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু তালাবদ্ধ ঘরের গ্যাস বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে সংস্থাটি।

আরও পড়ুন:

তেজগাঁও বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

তেজগাঁও বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট

/এমএস/
সম্পর্কিত
খাবার না খাওয়ায় বাবার ‘চড়’, মাথায় আঘাত পেয়ে শিশুর মৃত্যু
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
সর্বশেষ খবর
লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে এসে ব্রহ্মপুত্রে ডুবে শিশুর মৃত্যু
লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে এসে ব্রহ্মপুত্রে ডুবে শিশুর মৃত্যু
হত্যা মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের দুই কর্মকর্তার জামিন
হত্যা মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের দুই কর্মকর্তার জামিন
প্রজন্মের জন্য দুই মহাবিপদ!
প্রজন্মের জন্য দুই মহাবিপদ!
বরিশালে ঈদে বেড়াতে এসে দুই চাচাতো বোনসহ ৩ জন লাশ
বরিশালে ঈদে বেড়াতে এসে দুই চাচাতো বোনসহ ৩ জন লাশ
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’