X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় বিনোদনকেন্দ্রের অভাব বোঝা যায় উৎসব এলে

জুবায়ের আহমেদ
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:১৯আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ২০:৪৪

রাজধানী ঢাকায় নগরবাসীর জন্য চাহিদার তুলনায় বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। যেকোনও উৎসব কিংবা জাতীয় ছুটিতে এই অভাব আরও স্পষ্ট হয়। কেননা এসব দিনে ওই বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় নামে মানুষের ঢল। এতে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে বেড়াতে গিয়ে একপ্রকার ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের।

এ ছাড়া বিনোদনকেন্দ্রের স্বল্পতায় বারবার একই কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে৷ এতে অনেকটা একঘেয়েমি অনুভব করেন বড়রা। আর শিশুরা আগ্রহী হয়ে উঠছে অনলাইন গেমস অথবা শপিং মলের কৃত্রিম কিডস প্লে জোনে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে কথা হয় দর্শনার্থীদের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতিবছর বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় এসে একই জিনিস দেখতে হচ্ছে, কোনও নতুনত্ব নেই। আবার ভিড়ও বাড়ছে। ফলে প্রশান্তি নিয়ে উপভোগ করা যাচ্ছে না অবসর। একদিকে ভিড় আবার অতিরিক্ত গরমে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

নতুনত্বের অভাবে বিনোদনকেন্দ্রগুলো

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা মোদ্দাসের হোসেন বলেন, যাওয়ার তো তেমন কোনও জায়গা নেই। চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দেখার পাশাপাশি গাছপালার মাঝ দিয়ে পরিবার নিয়ে হাঁটা যায়, তাই আসি। কিন্তু ছুটির দিনগুলোয়, বিশেষ করে ঈদের সময় হেঁটেও শান্তি পাওয়া যায় না, মানুষের ভিড়। আর বাচ্চারাও ঠিকমতো কিছু দেখতে পায় না। তবু বাড়ির কাছে চিড়িয়াখানা, ঈদে বাচ্চাদের বুঝ দিতে এখানে আসি। কিন্তু নতুন তো কিছু নাই।

চিড়িয়াখানায় পাখির খাচা ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

চিড়িয়াখানার এই বিশাল জায়গার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না জানিয়ে আরেক দর্শনার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, চিড়িয়াখানায় অনেক কিছুর অভাব আছে, উপভোগের আরও নতুন কিছু আনা দরকার। দাদার কালের আমলে যেভাবে ছিল, সেভাবেই চলছে। চিড়িয়াখানার এত বড় জায়গা এইটাকে যদি সঠিকভাবে গোছানো যায়, ভিড় হলেও ভোগান্তি কমবে। একইভাবে জাতীয় উদ্যানেও মানুষ যেতে আগ্রহ পায়, এমন ব্যবস্থা করা উচিত।

উত্তরা থেকে চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন নাইম হাসান। ঢাকার বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় দুবার যাওয়ার মতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিনোদনকেন্দ্রগুলোকে আরও সংস্কার করা উচিত। মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটে। সে ক্ষেত্রে যদি বিনোদনের নতুন কোনও ধারণা নিয়ে আসে, তাহলে একঘেয়েমি মনে হবে না। উপভোগের ভিন্ন মাত্রা আসবে।

ঢাকায় বিনোদনকেন্দ্রের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে নভোথিয়েটারে আসা দর্শনার্থী ড. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, সব বিনোদনকেন্দ্রেই সেবার কমতি আছে। আমি পরিবার নিয়ে এসেছি যাত্রাবাড়ী ধনিয়া থেকে। আমার বাসার পাশে বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরার মতো কিছু নেই। তাই দূর থেকে এখানে ঘুরতে আসা। এতে আমার সময়ও যাচ্ছে, টাকাও খরচ হচ্ছে। যদি আমার এলাকার আশপাশে কোনও খোলা পার্ক থাকতো, শিশুদের খেলার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে সেখানেই সময় কাটাতাম।

উৎসবে সময় কাটাতে খোলা উদ্যানই সবার পছন্দ। ছবি: প্রতিবেদক

উৎসবে সময় কাটাতে খোলা উদ্যানই সবার পছন্দ

যেকোনও উৎসবেই রাজধানীবাসীর মূল উদ্দেশ্য থাকে পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর। এ ক্ষেত্রে বিনোদনকেন্দ্রেগুলোর পাশাপাশি খোলামেলা ঢাকার বিভিন্ন উদ্যানে ঘুরে বেড়ান তারা। তবে সময় কাটানোর মতো স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা না থাকায় উৎসবের দিনগুলোয় ঘুরেফিরে চন্দ্রিমা উদ্যান ও রমনা পার্কেই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

তারা বলছেন, যান্ত্রিক শহরে ছুটির দিনগুলোয় খোলা বাতাসে শ্বাস নেওয়া যায়, এমন জায়গা খোঁজেন সবাই। তা ছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষও বিনা খরচে সুন্দর সময় কাটাতে খোলা উদ্যানই বেছে নেন।

চন্দ্রিমা উদ্যানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা জাহেদুল ইসলাম বলেন, বিনোদনের জন্য প্রথমত খোলা জায়গা দরকার, যেখানে শ্বাস নেওয়া যায়, গাছপালার মাঝে কিছুক্ষণ বসা যায়। এমনিতে যেসব বিনোদনকেন্দ্র আছে, সেগুলোয় একবার যাওয়ার পর আর যেতে মন চায় না কারণ নতুন কিছু নেই। কিন্তু উদ্যানে বারবার আসা যায়; কখনও খারাপ লাগে না। তাই সরকারের উচিত সব এলাকায় ছোট করে হলেও খোলা পার্ক করা।

ঈদের ছুটিতে সংসদ সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানেও ছিল মানুষের ভিড়। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন

খালা ও খালাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে আসা কারখানা শ্রমিক বানি বেগম বলেন, ঢাকার মধ্যে এত বড় খোলা জায়গা পাওন যায় না। ঈদে ছুটি পাইছি, তাই প্লান কইরা আমরা এইখানে আসছি। এর আগের বছরও আসছিলাম। ভালো লাগছে জায়গাটা। অনেকেই ঘুরতে আসে। এখানে কোনও সমস্যা হয় না, নিজের মতন কইরা ঘোরা যায়।

পরিবার নিয়ে খোলা পার্কেই সময় কাটাতে পছন্দ জানিয়ে রমনা পার্কে আসা মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ছুটির দিনগুলোতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যেই পরিমাণ ভিড় হয়, তা আমার ভালো লাগে না। আমি সব সময় খোলা উদ্যানে গাছপালার মাঝে সময় কাটাতে পছন্দ করি। আর বাসা কাছে হওয়ায় এখানেই আসি পরিবার নিয়ে।

বিকল্প হয়ে উঠছে বড় সড়ক ও রেস্টুরেন্ট

উৎসবের দিনগুলোতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় থাকা এবং স্থানীয় কোনও খোলা পার্ক না থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিকল্প বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠছে। কেউবা আবার কেবল উৎসবের দিন সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্টে সময় কাটিয়েই বিনোদন নেন।

ঈদের সময় সন্ধ্যার দিকে রেস্তোরাঁগুলোতে জমে উঠেছিল আড্ডা। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন

রাজধানীর হাতিরঝিল, মাওয়া এক্সপ্রেস, ৩০০ ফুট সড়কসহ স্থানীয় বিভিন্ন সড়কে উৎসবের দিনগুলোতে দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায় তরুণ সম্প্রদায়কে। তারা বলেন, বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় ছুটির দিনে লোক বেশি থাকে। তা ছাড়া সড়কগুলোয় আসা-যাওয়া করতে সহজ, তাই সময় কাটাতে এখানেই চলে আসেন তারা।

অন্যদিকে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রেস্টুরেন্ট। পরিবার নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটাতে অনেকেই সেখানে যান। এ ছাড়া অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে শিশুদের খেলার জন্য প্লে জোন রাখে বলেও সেখানে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নগরবাসীর।

আধুনিক প্লে জোনে শিশুদের আগ্রহ বেশি

বর্তমানে শিশুদের মাঝে উৎসবে বিনোদনকেন্দ্র পছন্দের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। অনেক শিশু এখন বিভিন্ন মাল্টি শপিং মলে অবস্থিত ভার্চুয়াল ও প্লে জোনে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে।

অভিভাবকের সঙ্গে নভোথিয়েটারে ঘুরতে আসা শিশু রেদোয়ান বলে, আমার চিড়িয়াখানা, পার্ক এগুলোয় ঘুরতে ভালো লাগে না। আমার বসুন্ধরার টগী ফানে খেলতে ভালো লাগে। আব্বু বলছে এখানেও নতুন অনেক কিছু আছে। তাই আসতে রাজি হয়েছি।

আধুনিক কিডস প্লে জোন ব্যয়বহুল মন্তব্য করে রেদোয়ানের বাবা মো. মরতুজা বলেন, প্লে জোনগুলো দেশে নতুন এসেছে। বাচ্চারা ইন্টারনেটে এসব দেখে আবদার করে প্লে জোনে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এসব বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। সব সময় বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া যায় না। খরচ কম হলে হয়তো নিয়ে যাওয়া যেত।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র শিশু পার্ক

রাজধানীর অন্যতম ও জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র শাহবাগের শিশুপার্ক চার বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। গণপূর্ত অধিদফতর মালিকানাধীন পার্কটি পরিচালনার দায়িত্ব এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। ২০১৯ সালে পার্কটিকে নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। কিন্তু চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশুপার্কের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাজেটজনিত জটিলতায় পার্কের কাজ এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।

তবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, পার্কটি নির্মাণের সব জটিলতা শেষ। শিগগিরই শিশুপার্কটির কাজ শুরু হবে।

/এনএআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
মুঠোফোন কানে, ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম