X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারণা করতো তারা

কবির হোসেন
২৯ মে ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৫:৫৪

মিরপুরের বাসিন্দা মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের এক স্বজন থাকেন মালয়েশিয়ায়। তার মাধ্যমেই কথা হচ্ছিল বিদেশ যাওয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে যোগাযোগের একপর্যায়ে তিনি কথামতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকাও পাঠান। কিন্তু পরে জানতে পারেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার সেই স্বজন তার কাছে টাকা চাননি। মূলত তার ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতারকরা তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। 

প্রতারিত হয়ে মিরপুর মডেল থানায় এক লিখিত অভিযোগ করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তদন্তে নেমে এক চক্রের খোঁজ পায় পুলিশ, কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়। শনিবার (২৭ মে) পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে নাটোর জেলার লালপুর এবং রাজশাহী জেলার বাঘা থানা এলাকা থেকে এই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারদের একজন রনজু আহম্মেদ (২২), পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। অথচ পরিচয় দেয় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশের কর্মকর্তা। আরেকজন মো. ফজলে রাব্বি (২০) তার কাজ একজনের নামে সিম অন্যের জনের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা। তৃতীয় জন মো. রাজন আলী ওরফে ইমো রাজন (২২)। যে মূলত ইমো অ্যাপ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের নামে ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে। পরে ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কৌশলে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতো সে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ তিন প্রতারক।

ভুক্তভোগী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি একজন ফল ব্যবসায়ী। মিরপুরে বসবাস করি। আমার বড় জামাই বিল্লাল হোসেনের মামা রহুল আমিন মালয়েশিয়া থাকেন। তার মাধ্যমে আমার জামাই বিল্লাল হোসেনের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা চলছিল এবং তার যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্তও হয়।’

গত বছর ২০২২ সালের ২১ আগস্ট রাত ৮টার সময় বিল্লাল মালয়েশিয়া তার মামার সঙ্গে ইমো অ্যাপের মাধ্যম কথা হয়। সে কিছু টাকা পাঠাতে বলে। পরবর্তী সময়ে ২৪ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে বিল্লাল এর মামা রহুল আমিনকে ইমোতে ফোন করে এবং তার ইমো নম্বর থেকে বিল্লালের নম্বরে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানায় যে, সে কারখানায় আছে এবং টাকাগুলো একটি নম্বরে বিকাশ করার জন্য। পরে ওইদিন দুপুর থেকে পরের দিন অর্থাৎ ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত মিরপুর মডেল থানার কল্যাণপুর নতুন বাজার মো. কবির হোসেনের বিকাশের দোকানসহ পাশে আরও কয়েকটি দোকান হতে ২ লাখ ৬ হাজার টাকা পাঠায়। তবে ওইদিন রাত ৮টায় রহুল আমিন বিল্লালকে ফোন করে বলে তার ইমু নাম্বার হ্যাক হয়েছে। সে কোনও বিকাশ নম্বর দেয়নি।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের এই তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা ডিএমপির মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। শনিবার (২৭ মে) নাটোরের লালপুর এবং রাজশাহী জেলার বাঘা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

এ প্রসঙ্গে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা সাহায্যের নামে বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। রাজন নামের এই যুবক এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত ইমো রাজন নামে। সে অভিনব উপায়ে ইমোর মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতারণার উদ্দেশ্যে ইমোতে বিভিন্ন নামে গ্রুপ খোলে রাজন। ইমো সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা বলা হতো এসব গ্রুপের সদস্যদের। এই গ্রুপে কেউ যুক্ত হলে তাকে টার্গেট করা হয়। এরপর বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন নম্বর থেকে তার ইমোতে বিপুল পরিমাণ স্টিকার মেসেজ পাঠানো হয়। এত বিপুল পরিমাণ ম্যাসেজ আসার এক পর্যায়ে ওই নম্বর হ্যাং হয়ে যায়। তখন ওই ব্যক্তি গ্রুপে সহযোগিতা চান। তখন রাজন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এই ‘সমস্যা’ সমাধানের জন্য তার আইডিতে ঢোকার একসেস চায়। 

এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছে একটি ওটিপি যায়, ওই ওটিপির মাধ্যমে অন্যরাও একসেস পায়। ইমোতে ঢুকে রাজন সেই ইমোর সব মেসেজ পড়ে নেয় এবং তার আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে তথ্য নেন। এরপর তার আত্মীয়ের কাছে ‘আমি বিপদে পরেছি, টাকা পাঠান’ ‘মা অসুস্থ, টাকা পাঠান’ জাতীয় ম্যাসেজ পাঠিয়ে ৫ হাজার, ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তার এমন বিভিন্ন গ্রুপ আছে; তার মধ্যে ‘রাজন স্টোরি’, ‘রাজন সলিউশন’ উল্লেখযোগ্য।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, রনজু আহম্মেদ পেশায় মুদি দোকানদার। কিন্তু সে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে। দোকানে বসেই বিকাশ কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় সে। এছাড়া একজনের নামে সিম অন্যের কাছে বিক্রি করে ফজলে রাব্বি। সাধারণত সড়কের পাশে যারা সিম বিক্রি করে, তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করে মানুষের কাছ থেকে একাধিক ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করে। পরে সেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আরও সিম ইস্যু করে। সেসব সিম উচ্চমূল্যে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করে রাব্বি। সাধারণত সিমের দামের তুলনায় এগুলোর মূল্য চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। এসব সিম দিয়েই প্রতারকরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে।

ওসি আরও বলেন, ‘এ প্রতারক চক্রটিকে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় এভাবে প্রতারণা করে আসছে। এদের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও কিছু প্রতারকের নাম জানতে পেরেছি। তাদেরও শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার জুজুৎসুর নিউটন
দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে পুলিশ সক্ষম: আইজিপি
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
সর্বশেষ খবর
ইতিহাস গড়ে বুন্দেসলিগা শেষ করলো ‘ইনভিন্সিবল’ লেভারকুসেন
ইতিহাস গড়ে বুন্দেসলিগা শেষ করলো ‘ইনভিন্সিবল’ লেভারকুসেন
জলবায়ু পরিবর্তন: ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে বাংলাদেশে
জলবায়ু পরিবর্তন: ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে বাংলাদেশে
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি