X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি ক্যাবের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ জুলাই ২০২৩, ১৭:২৩আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ১৭:২৩

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান। ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা তারা তৈরি করবে। কিন্তু ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব যদি তাদের দেওয়া হয়, তাহলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে সীমাবদ্ধতার শিকার হবে বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চাই।’

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত ব্যবসাবান্ধব প্রতিষ্ঠান। ব্যবসার সুযোগ সুবিধা তারা তৈরি করবে, প্রতিযোগিতামূলক হবে। তাতে করে পণ্যের দাম ও মান ন্যায্য-যৌক্তিক হবে। কিন্তু ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব যদি তাদের দেওয়া হয়, তাহলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে সীমাবদ্ধতার শিকার হবে। যেটা আমরা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেখেছি। হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করা হয়েছে। আমরা ভোক্তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চাই। যে মন্ত্রণালয় অন্য কোনও মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রভাবিত হবে না, ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দেবে না। সাপ্লাই চেনের সব খানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোক্তাদের সেখানে ক্ষমতায়ন থাকতে হবে। আমরা চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমদানি পর্যায়ের তথ্য পাই না। সেটা পেলে আমরা সাপ্লাই চেনের তথ্য অ্যানালাইসিস করতে পারতাম।’

তিনি বলেন, ‘দেশে একটি অসাধু ব্যবসাবান্ধব বাজার ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারের ওপর শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রককারী সংস্থার তেমন কোনও ভূমিকা নেই। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিচ্ছেন, সেখানে মন্ত্রীরা বলছেন— সব ঠিক আছে। মূলত তারা সুবিধাভোগী।’

মূল প্রবন্ধে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকারের ধারণা— করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ সংকট, বর্ধিত চাহিদা, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। আর  সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ— এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণগ্রহণের ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে, সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তবে দ্রব্যমূল্যে বাড়ার পেছনে সাধারণ মানুষ এসব বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারেনি উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, ‘চাহিদা-সরবরাহের ফারাক, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অথবা মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি, কোনও ব্যাখ্যাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক নয়। তারা মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছে। তাদের জীবনমানের অবক্ষয় হচ্ছে। তারা মনে করে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।’

ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘ভোক্তা সম্পর্কিত’ একটি বিভাগ রাখার পরামর্শ দিয়ে নানা করণীয় তুলে ধরে গোলাম রহমান বলেন, ‘‘জনজীবনে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’ অনুসরণের ফলাফল মূল্যায়ন করে এর উপযোগিতা পুনর্নির্ধারণ ও সংস্কারের সময় এসেছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। অতএব, গুটিকতক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও কার্টেলের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারকে খাদ্য বিভাগ, টিসিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’

সরকারের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নীতিতে জনস্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘‘ভারত সরকার ৯০ এর দশকে ভোক্তা-স্বার্থ দেখার জন্য ‘মিনিস্ট্রি অব কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও ‘ভোক্তাবান্ধব, জনবান্ধব’ নীতি গ্রহণ সময়ের দাবি। ন্যায্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ, ভোক্তা-স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদারকি, সরকারের নীতি নির্ধারণে ভোক্তা-স্বার্থের প্রতিফলন, ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘ভোক্তা সম্পর্কিত’ একটি বিভাগ সৃষ্টি সময়োপযোগী হবে বলে মনে করি।’

ভোক্তার অধিদফতরের সাবেক ডিজি মো. আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে আর কমতে চায় না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা। তাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। এদেশের ভোক্তারা সচেতন হলে তারা কখনও প্রতারিত হবে না।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ক্যাব ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শামস এ খান প্রমুখ।

/এএজে/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
বেশি দামে ফ্যান বিক্রি করায় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়