X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গম এলাকায় জমি কিনে জঙ্গি প্রশিক্ষণের আস্তানা!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ আগস্ট ২০২৩, ২০:৪৮আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ২১:০২

কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়ে ছয়টি পরিবার। ‘সশস্ত্র জিহাদে’ অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তারা চলে যায় মৌলভীবাজারের পার্বত্য এলাকায়। সেখানে এক আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে তারা। কথিত ইমাম মাহমুদের অনুসারী জামিল কুলাউড়া থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে ৫০ শতাংশ জমি কিনে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১২ আগস্ট) মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় সিটিটিসি। ‘অপারেশন হিলসাইড’ নামের এই অভিযানে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে চার জন পুরুষ ও ১০ নারী। এ সময় আটটি শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়। সিটিটিসি দাবি করে, অভিযানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, ছবি-রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, কমান্ডো রুট, পাঞ্চিং ব্যাগ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উগ্রবাদী বই, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায়, কথিত ইমাম মাহমুদ তাদের বলেন, যারা এই জিহাদে অংশ নেবে তারা সবাই পরকালে পুরস্কৃত হবে। জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো গৃহ ত্যাগ তথা হিজরত। তাই জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়ার উদ্দেশ্যেই ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা সবাই ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, তারা আরও জানায়, জামিল নামক কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী টাট্টিউলি গ্রামে ৫০ শতাংশ জমি কিনে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছিল।

সম্প্রতি যশোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকদের পরিবারসহ এবং পরিবার ছাড়া নিখোঁজ হওয়ার তথ্য আসে। পরে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। নিখোঁজদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানা থেকে ডা. সোহেল তানজীম রানা, যশোর জেলা থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর থেকে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ আরও অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে গত ৭ আগস্ট রাজধানীর দারুসসালাম থানাধীন গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে সপরিবারে ঘর ছেড়ে আসা মোট ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা আট শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোট ছয়টি পরিবার হিজরতের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়েছে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা থেকে হিজরতকারী পাঁচটি পরিবার এবং ঝিনাইদহ জেলা থেকে হিজরতকারী একটি পরিবার ছিল।

গত ১২ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের আরও এক সদস্য মো. ফরহাদকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি ইউনিট। পরে ফরহাদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানা এলাকায় একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর আড়ালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বেশ কিছু অনুসারী আস্তানা স্থাপন করেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে ‘অপারেশন হিলসাইড’ চালানো হয়।

এসব আসামিকে বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন,  ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামেই তারা বিভিন্ন লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা সক্রিয় হচ্ছে কিনা, তাদের কোনও নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

তিনি বলেন, ইমাম মাহমুদ বলে যিনি নিজেকে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন তিনিসহ এই সংগঠনের অন্য সদস্যরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। গ্রেফতার করা গেলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার পাওয়া যাবে।

আস্তানাটি কতদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল– জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, দুই মাস আগে এটি স্থাপন করা হয়েছিল। আস্তানা তৈরি করার জন্য ৫০ শতক জায়গা কেনা হয়েছিল। যার নামে ওই জমির দলিল করা হয়েছিল সেই দলিল গ্রহীতার নামও আমরা পেয়েছি। তবে কত টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছিল সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তাদের সদস্যদের জিহাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল, সবকিছুই ওখান থেকে পরিচালনা করা হতো।

/কেএইচ/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নব্য জেএমবি’র সদস্য মিলনের দোষ স্বীকার
আনসার আল ইসলামের সদস্য গ্রেফতার
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের ধরপাকড়
সর্বশেষ খবর
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!