X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে ইংরেজি অর্থবছরে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৬আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৬

বিদ্যমান বাংলা সনের পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে অর্থবছরে (জুলাই-জুন)। এমন বিধান যুক্ত করে রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ‘ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩’ পাস হয়েছে। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী দলীয় সদস্যদের আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ‘ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স’ রদ করে নতুন এ আইনটি পাস করা হয়। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলায় এই আইন কার্যকর হবে না।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যরা ভূমি অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের যে সব সেক্টরে দুর্নীতি হয়, তার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম। এরজন্য দায়ী ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, জরিপের নামে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। যেখানেই শুরু হয় জরিপ, সেখানকার মানুষ হয় গরিব।

এসব সমালোচনার জবাবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে এসব হয়রানি থেকে রেহাই দিতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইনে রাজস্ব আদায়ের কাজ শুরু হওয়ায় হয়রানি অনেক কমে আসছে। প্রতিদিন সরকার অনলাইনেই পাঁচ কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব পাচ্ছে।’ এটা বিশাল অগ্রগতি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, একনাগাড়ে তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা হলে প্রথম থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে জরিমানা হবে। তৃতীয় বছর শেষে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর সার্টিফিকেট মামলা করে আদায় করা হবে।

বিলে বলা হয়েছে, কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবারভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষি ভূমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলা সন (বৈশাখ–চৈত্র) হিসাবে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে জুলাই–জুন অর্থবছর হিসাবে। প্রতিবছর জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর জরিমানা ছাড়া দেওয়া যাবে।

বিলে বলা হয়েছে, আখ ও লবণ চাষের ভূমি এবং কৃষকের পুকুরও (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ব্যতীত) মওকুফের আওতায় থাকবে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি ভূমি পল্লি এলাকা বা পৌর এলাকা যেকোনও স্থানে অবস্থিত হোক, সব ক্ষেত্রে অভিন্ন ভূমি উন্নয়ন কর হার ও শর্ত প্রযোজ্য হবে। সরকার যেকোনও ব্যক্তি বা শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ বা সংস্থার উন্নয়ন কর মওকুফ করতে পারবে।

বিলে বলা হয়, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবছর জুলাইয়ের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে ভূমির ব্যবহারভিত্তিক অবস্থা বিবেচনায় নির্ধারিত ফরমে সব মৌজার ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে, তা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার তা পরীক্ষা করে অনুমোদন করবেন। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা যাবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতি সারা দেশে পূর্ণরূপে প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে যেকোনও ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘ভূমি জরিপ পুরনো নিয়মে চলছে। জরিপ মানুষকে ফকির বানিয়ে দেয়। যেখানে জরিপ, সেখানেই মানুষ হচ্ছে গরিব। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নয়-ছয় করে, কাগজ নাই, এটা নাই ওইটা নাই বলে টাকা নেয়। যারা চালাক মানুষ তারা ভূমি কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো কোনও প্রতিকার পান না। মানুষ জরিপে হয়রানির শিকার হচ্ছে।’ ৯০ শতাংশ জরিপকারী দুর্নীতিবাজ বলেও দাবি করেন জাপার এই সদস্য। তহশিলদারদের সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণা রয়েছে উল্লেখ করে ইউএনও, এসিল্যান্ডদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভূমিমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জরিপকারীরা প্রবাসীদের পরিবারের ওপর জুলুম বেশি করে— এমন দাবি করে রুস্তম আলী ফরাজী জরিপে দুর্নীতি বন্ধে মন্ত্রীকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আইনের নাম ভূমি উন্নয়ন কর, কিন্তু এটা দিয়ে কার ভূমির উন্নয়ন করা হবে? যার ভূমি তার তো কোনও উন্নয়ন করা হচ্ছে না।’ এ কর দিয়ে ভূমির কী উন্নয়ন হচ্ছে এটা জানতে চান তিনি।

একেক জায়গায় একেক মৌজা রেট উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রাররা।’ তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো মৌজা রেট বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী যদি এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ার, কানুনগো, সাব-রেজিস্ট্রারদের সমন্বয়ে বসেন, তাহলে দেখা যাবে— সবচেয়ে কম রেটের মৌজায় বেশি দাম দিয়েছে, আর সবচেয়ে বেশি যেটা হওয়া উচিত, সেখানে সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। সবচেয়ে কম রেটে মানুষ কেনাবেচা করছে।’

ভূমি বিরোধ আইন সব থেকে বেশি পার্বত্য অঞ্চলে হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনও মৌজা রেট নেই। ডিসি সাহেব ইচ্ছে করলে যদি কোনও জমি হুকুম দখল করা হয়, সরকার অধিগ্রহণ করে তাহলে ডিসি যেটা দাম ধরবে সেটাই হবে।’ তিনি মনে করেন, তিন পার্বত্য জেলায় মৌজা রেট দেওয়া উচিত, এতে মানুষ স্বাচ্ছদ্যবোধ করবে।

গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাংলাদেশের যেসব সেক্টরে দুর্নীতি হয়, তার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম। সিভিল মামলার কয়েক লাখই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমি সংক্রান্ত। ২০ থেকে ৩০ বছর মামলার পেছনে ব্যয় করেও মানুষ কোনও আদেশ বা নির্দেশনা পাচ্ছে না। অনেক মানুষ জীবদ্দশায় মামলার  রায় দেখে যেতে পারে না। অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য দায়ী হচ্ছে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ভূমির কোনও সেবা ঘুষ দেওয়া ছাড়া পাওয়া যায় না। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। ফলে মানুষ হয়রানি হচ্ছে, আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘জরিপকে স্বচ্ছ করতে হবে। জরিপের কিছু কিছু লোক মাস্টাররোলের, তারা বেতন পান না, দৈনিক ভাতা পান। এরা মানুষের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে একজনের জমি অন্যের নামে দিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি আমার জমি, আমার নামে কাগজ, খাজনার রশিদ আছে, কিন্তু যার দখলে আছে তার নামে পর্চা দিয়ে দিয়েছে। আমাকে বলেছে ৩০ ধারা করেন, ৩২ ধারা করেন। বেশিরভাগ ঘটনাই এরকম। জরিপের কাগজ হলে সমস্যার সমাধান হবে।’

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সর্বশেষ খবর
ভোটারবিহীন নির্বাচন চুন ছাড়া পানের মতো: ইসি রাশেদা
ভোটারবিহীন নির্বাচন চুন ছাড়া পানের মতো: ইসি রাশেদা
সিরি আ’য় এবারই প্রথম এক ম্যাচে সব নারী রেফারি
সিরি আ’য় এবারই প্রথম এক ম্যাচে সব নারী রেফারি
ফেরিঘাটে টেম্পুর ধাক্কায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত
ফেরিঘাটে টেম্পুর ধাক্কায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত
পাকিস্তানে উপ-প্রধানমন্ত্রী হলেন ইসহাক দার, পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ পিটিআইয়ের
পাকিস্তানে উপ-প্রধানমন্ত্রী হলেন ইসহাক দার, পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ পিটিআইয়ের
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ