X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২
কৃষি মার্কেটে আগুন

মেয়রের অপেক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা, ফিরলেই সিদ্ধান্ত

কবির হোসেন
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৩১আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৩২

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের আগুনে সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ীরা এখন নতুনভাবে ব্যবসা শুরুর অপেক্ষায় আছেন। কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছে, মার্কেটটি নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা সেখানে আবারও ব্যবসার সুযোগ পাবেন। তবে এ বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মার্কেট সমিতি জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ (সিজিআই) সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরে এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এখন তার অপেক্ষাতে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। 

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের ময়লা সরানোর কাজ এখনও চলমান। বুলডোজার দিয়ে এসব ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগুনে সব হারানো ব্যবসায়ীদেরও সেখানে অবস্থান করতেও দেখা গেছে। এখন তাদের একটাই দাবি, নতুনভাবে মার্কেটে ব্যবসা শুরু করা।

মো. শহিদুল ইসলাম কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী। রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট মার্কেটে এক সময় কাপড়ের দোকান ছিল তার। ২০১৯ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে সেই দোকান পুড়ে যায়। সে সময় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। পরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। নতুন দোকান খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে একটি দোকান খালি পান। পরে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে আবার ব্যবসা শুরু করেন। কৃষি মার্কেটে ‘তামিম ফ্যাশন’ নামে তার ওই দোকানে রেডিমেড গার্মেন্টস ও শিশুদের কাপড় বিক্রি হতো। শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। তিন বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এর আগে খিলগাঁও রেলগেট মার্কেটে কাপড়ের দোকান ছিল। সেটিও একদিন আগুনে শেষ হয়ে যায়।’

কৃষি মার্কেটে পুড়ে যাওয়া দোকান তিনি বলেন, ‘আমার নিজের মূলধন বলতে তেমন কিছু নেই। পার্টি থেকে মাল নিয়ে বেচে টাকা দিতাম। এছাড়াও দেনা আছে। আমার সাত সদস্যের পরিবার। সবাই আমার আয়ের ওপর নির্ভর। আমাদের এখন একটাই দাবি, নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চাই।’

মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী ‘ভাই ভাই ক্লোথ স্টোরের’ মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ‘৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মালামাল ছিল আমার দোকানে। দোকান ভরা শাড়ি ছিল। পাশেই ছিল গোডাউন। কিছুই বের করতে পারিনি। আমার সব শেষ। সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, মার্কেট আগের মতো ফিট করে, নতুন করে ব্যবসার সুযোগ করে দেবে। আমরা ব্যবসায়ীরা সেই অপেক্ষা করছি। শুনেছি, মেয়র বিদেশ থেকে এলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা মেয়রের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি এসে ভালো একটি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকে এখানে ব্যবসা করছি। এমন ঘটনার সম্মুখীন আর কখনও হতে হয়নি। ব্যাংক লোন আছে। ব্যবসা না করতে পারলে লোন শোধ করবো কী করে।’

‘এশিয়া গার্মেন্টস’র মালিক রাসেল দেওয়ান বলেন, ‘যা ছিল সবই গেছে। আমরা শুধু জীবিত আছি। যদি ব্যবসা না করতে পারি, তাহলে আমাদের সামনের দিনগুলো কী হবে জানি না। গত ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করছি। অনেক পরিশ্রম করে, কষ্ট করে এ জায়গায় এসেছিলাম। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমাদের যেন নতুনভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়।’

আগুনে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন দোকানের ধ্বংসস্তূপ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার মালিক সমিতির কার্যনির্বাহীর কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। যা-ই করবে সিদ্ধান্ত নেবে সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার সলিমুল্লাহ সলু ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন, মেয়র দেশে ফিরলে মার্কেটটি যেভাবে ছিল, ঠিক সেভাবে নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এখন পরিষ্কার করা হচ্ছে। মেয়র আসার পর কাজগুলো আরও দ্রুত করা সম্ভব হবে।’

উল্লেখ্য, ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর পৌনে ৪টার দিকে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানান মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সারা দিনেও পুরোপুরি আগুন নেভাতে পারেনি তারা। ২৮ ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, এ অগ্নিকাণ্ডে কৃষি মার্কেটের ২১৭টি দোকান পুড়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি।

ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে মার্কেটে ৩৫০টি দোকান ছিল। তবে ডিএনসিসির নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজার মতে, ৩১৭টি দোকান বরাদ্দ ছিল। ২১৭টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

/আরকে/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
টাঙ্গাইলে যৌনপল্লিতে আগুনে পুড়লো ২২ ঘর
চট্টগ্রামে মমতা মাতৃসদন ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আগুন
গাজী টায়ার কারখানায় আগুনের ঘটনায় পাঁচ যুবক গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
ড্রাগন ফলের জ্যাম বানানোর রেসিপি জেনে নিন
ড্রাগন ফলের জ্যাম বানানোর রেসিপি জেনে নিন
লেকে ভাসছিল ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর লাশ, স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যা
লেকে ভাসছিল ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর লাশ, স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যা
টুভালুর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রত্যাশী
টুভালুর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রত্যাশী
দুদকের বিরুদ্ধে হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ, ৪ প্রতারক গ্রেফতার
দুদকের বিরুদ্ধে হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ, ৪ প্রতারক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ উপপরিচালকের‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’