দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদীর স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠছে পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে। পরোয়ানা ফেরত কাগজে বিচারকের জায়গায় নিজেরা স্বাক্ষর করে আসছিল আদালতের মোটরযান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এস আই ফুয়াদ উদ্দিন ও জিআরও (কনস্টেবল) আবু মুসা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আদালত থেকে তারা পালিয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১০ নম্বর আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইমরান হোসেন। রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় তিনি এই মামলা করেন।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত দেওয়ার কথাও জানায় আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগ।
জানা যায়, লাইসেন্স না থাকায় দুটি গাড়ির চালককে জরিমানা করে ট্রাফিক পুলিশ। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নন-এফআইআর পৃথক দুটি মামলা আদালতে পাঠানো হয়। এরপর আদালত দুই চালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তী সময়ে পরোয়ানা ফেরতের কাগজে উপপরিদর্শক ফুয়াদ উদ্দিন ও কনস্টেবল আবু মুসা বিচারকের স্বাক্ষর জাল করেন। এই ঘটনা জানাজানি হলে আসামি দুই পুলিশ সদস্য পালিয়ে যায়। এরপর রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় তাদের বিরুদ্ধে সিএমএম আদালত-১০-এর বেঞ্চ সহকারী ইমরান হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১০ নম্বর আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইমরান হোসেন বলেন, আমার স্যার (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী) ১০ নম্বর আদালতের পাশাপাশি মোটরযান সম্পর্কিত মামলা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে মোটরযান শাখার আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এস আই মো. ফুয়াদ উদ্দিন নন-এফআইআর দুটি মামলা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করে। পরে মামলা দুটির আসামি না থাকায় বিচারক কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেননি। পরবর্তীতে বিচারক জানতে পারেন এই মামলা দুটির জব্দকৃত আলামত নথিতে মোটরযান শাখার ইনচার্জ এসআই মো. ফুয়াদ উদ্দিন ও মোটরযান শাখার জিআরও মো. আবু মুছাসহ তাদের অন্য সহযোগীদের যোগসাজশে স্যারের (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী) স্বাক্ষর জাল করেছে। তারা পরোয়ানা ফেরত কাগজে ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজেরা স্বাক্ষর দিয়ে আসামিদের দিয়ে দেয়।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, মামলার নথিতে বিচারকের কোনও স্বাক্ষর নাই এবং কোনও জরিমানাও করেন নাই। বিচারক ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন মোটরযান শাখার ইনচার্জ এসআই মো. ফুয়াদ উদ্দিন ও জিআরও মো. আবু মুছা তাদের অন্য সহযোগীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে একই ধরনের অপরাধ করে আসছেন।
মামলার বাদী ইমরান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার স্যারের (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী) স্বাক্ষর জাল করে দীর্ঘদিন ধরে আসামিরা প্রতারণা করে আসছিলেন। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা একটা মামলা করেছি।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হেডকোয়ার্টারে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। বর্তমানে তারা পলাতক থাকায় আইনে সোপর্দ করতে পারিনি।
কোতোয়ালি থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিচারকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করায় আদালতের মোটরযান শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই ফুয়াদ উদ্দিন ও জিআরও আবু মুসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।