তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভুঁইয়া।
শুনানির শুরুতে দুজনের জামিনের বিষয়টি আদালতকে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখন লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?
আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না?
আদালত তার বক্তব্যের একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের জরিমানা স্থগিত করে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
জানা গেছে, সংবিধান অনুসারে আগামী ১৬ অক্টোবর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসরের যাচ্ছেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ।
এর আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেন। তারা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন। পাশাপাশি তারা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ।
একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি শুরু হয় এই মামলার বিচার কাজ। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছরের জন্য স্থগিত থাকে বিচারকাজ। পরে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এই মামলার শুনানি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার এই মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আসামিদের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াতের আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে জামিন চান ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলান।
আরও পড়ুন: