X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাইলটদের সনদ যাচাই করছে ইউএস-বাংলা

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৭

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ পাকিস্তানের পতাকাবাহী এয়ারলাইন ‘পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন’। একটি দুর্ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসে এয়ারলাইনটির দেড়শো পাইলটের সনদ জাল। এরপরই বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ হতে থাকে এই এয়ারলাইনটি। সম্প্রতি বাংলাদেশেও জাল সনদে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনে পাইলট নিয়োগের ঘটনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল পাইলটের সনদ যাচাই করছে বেসরকারি এয়ারলাইন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে ‘অযোগ্য পাইলট’ নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে। যেখানে শিক্ষা সনদ জাল থাকার পরও নিয়োগের ঘটনাও রয়েছে।  ২০২১ সালে ২৩ নভেম্বর বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজের জন্য আট জন ক্যাপ্টেন ও ছয় জন ফার্স্ট অফিসার চুক্তিভিত্তিক (৫ বছর) নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিমান। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী লোকবল নির্বাচন করে প্রশিক্ষণে পাঠায় বিমান। এরমধ্যে চার জন ক্যাপ্টেন ও একজন ফার্স্ট অফিসার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্ত হতে সক্ষম হন। বাকিরা প্রশিক্ষণের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন আর কয়েকজনের সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।

জানা গেছে, শুরুতে এসব অভিযোগ আমলে নেননি বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) যাহিদ হোসেন। তখন বিমানের পক্ষ থেকে বলা হয়, যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করেই আবেদনকারীদের মধ্য থেকে আট জন ক্যাপ্টেন ও ছয় জন ফার্স্ট অফিসারকে শর্ত সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। বিমানের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য, জাল সার্টিফিকিটে ধরা পড়ার পরও কীভাবে তারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলো, সেই উত্তর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, সেই সময় বিমানের তৎকালীন চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন সাজিদ আহমেদের স্ত্রী সাদিয়া আহমেদ নিয়োগ পান। প্রাথমিক বাছাই শেষে সাদিয়া আহমেদকে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য চুক্তি করে বিমান। তবে তিনি নিয়োগ পাওয়ার জন্য যে সনদ জমা দিয়েছেন তা জাল। অন্যদিকে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নির্বাচিত আল মেহেদী ইসলামও জাল এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স (এটিপিএল) জমা দেন।

২০২০ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনের একটি এয়ারবাস এ ৩২০ মডেলের উড়োজাহাজ দুঘর্টনায় ক্র্যাশ করে ক্রু-সহ ৯৭ জন নিহত হন। সেই ঘটনার তদেন্ত উঠে আসে, লাহোর থেকে যাত্রা করা ফ্লাইটটির পাইলট যথাযথ প্রটোকল মানেননি। দুর্ঘটনার তদন্তে আরও উঠে আসে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনের সেই পাইলটের সনদ জাল। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অনুসন্ধান করে দেশটির বিভিন্ন এয়ারলাইনের ২৬২ জন পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করে। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে পাইলট লাইসেন্স পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে জাল লাইসেন্স বা প্রতারণা করে পাইলট লাইসেন্স নেওয়ার কারণে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনের ১৫০ জন পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হয়। আর এসব কারণে বিভিন্ন দেশ এয়ারলাইনটিকে নিষিদ্ধ করে।

এমন প্রেক্ষাপটে নিজেদের সকল পাইলটের লাইসেন্স ও অন্যান্য সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে  ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরু করে ইউএস-বাংলা, তাদের বহরে রয়েছে ২০টি উড়োজাহাজ। এসব উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য ১৭২ জন পাইলট এয়ারলাইনটিতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে, পাইলটের শিক্ষাগত সনদ যাচাই করেছে এয়ারলাইনটি। পাইলট ট্রেনিং একাডেমিগুলো থেকে যাচাই করা হচ্ছে সনদ। এছাড়া, নিজস্ব  উদ্যোগে ২১ জনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এপিক ফ্লাইট অ্যাকাডেমিতে পাইলট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে এয়ারলাইনটি।

গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি লিমিটেডের সাবেক সিইও ও এভিয়েশন বিশ্লেষক উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে এয়ারলাইনগুলো মূলত দেখে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির লাইসেন্স প্রাপ্ত কিনা। কিন্তু এয়ারলাইনগুলো চাইলে অন্যান্য শিক্ষাগত সনদ যাচাই করতে পারে। সনদ যাচাই করে যথাযথ নিয়োগ হলে এয়ারলাইনের জন্য ভালো। আর কেউ জালিয়াতির মাধ্যমে পাইলট লাইসেন্স নেওয়ার চেষ্টা করলে সিভিল এভিয়েশনের অথরিটির আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ পাইলট হলে দেশ-বিদেশে এভিয়েশন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে যাত্রীরা সুরক্ষা ঝুঁকিতে পড়েবেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল আইন অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি শিক্ষা সনদ, নিবন্ধন সনদ, লাইসেন্স বা পারমিট জাল বা পরিবর্তন করেন বা করার চেষ্টা করলে অনধিক ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

এ প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনের একাউন্টেবল ম্যানেজার (সিইও) ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান বলেন, ইউএস-বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট আসোসিয়েশন (আয়াটা) এয়ারলাইন্স হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, আয়াটা অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ) নিরাপত্তা মান অর্জন করেছে। দীর্ঘ ৯ বছরের চলার পথ পাড়ি দিয়ে ইউএস-বাংলা ১০ম বর্ষে পদার্পণ করছে। কোনও ব্যক্তির জালিয়াতি বা অপরাধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউএস-বাংলা ক্ষতিগ্রস্ত হোক— কর্তৃপক্ষ কখনোই এটা হওয়ার সুযোগ দেবে না। এজন্য পাইলটের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখি। নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের সার্টিফিকেট যাচাই করেই চূড়ান্ত করা হয়।

তবে সনদ যাচাইয়ে অনেকগুলো ধাপে বেশ প্রতিকূলতা ছিল বলেও জানান বেসরকারি এয়ারলাইনটির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পাইলটদের অনেকে বিদেশের ফ্লাইং একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সনদ যাচাই প্রক্রিয়ায় কোনও কোনও দেশের ফ্লাইং একাডেমি থেকে আমরা সহজে সাড়া পাইনি। অন্যদিকে যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অনেক আগের, তাদেরগুলো অনলাইনে চেক করাও সম্ভব হয় না। আমাদের সংশ্লিষ্ট বোর্ডে যোগাযোগ করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ১৭২ জন পাইলটের মধ্যে কারও সনদে জালিয়াতি পাওয়া যায়নি। জালিয়াতি করে ইউএস-বাংলায় নিয়োগ পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিল্কি চুলের জন্য ডিম ব্যবহারের ৭ উপায়
সিল্কি চুলের জন্য ডিম ব্যবহারের ৭ উপায়
স্থানীয় সরকার না ‘এমপি সরকার’?
স্থানীয় সরকার না ‘এমপি সরকার’?
চার প্রেক্ষাগৃহে ‌‘পটু’
এ সপ্তাহের ছবিচার প্রেক্ষাগৃহে ‌‘পটু’
আলোর স্বল্পতা রোধে মোমবাতি সঙ্গে আনার পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের
আলোর স্বল্পতা রোধে মোমবাতি সঙ্গে আনার পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
৫ জনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান সেই সুইটি
৫ জনকে হারিয়ে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান সেই সুইটি
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি