X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সংঘর্ষ, গুলি, আগুন, ভাঙচুর ও প্রাণহানিতে শেষ হলো ৩ দিনের অবরোধ

জামাল উদ্দিন
০২ নভেম্বর ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ২২:৩১

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর তিনদিনের টানা অবরোধে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন পরিবহনে আগুন, ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। অবরোধকারীদের নাশকতা মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়েছে। এসব সংঘর্ষে পিকেটিংয়ে জড়িত তিনজন নিহত ও উভয়পক্ষে কয়েকশ’ আহত হয়েছে।

পুলিশ ও দলীয় সূত্রগুলো জানায়, ৩১ অক্টোবর ভোর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে অবরোধ কর্মসূচি পালনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস (টিয়ারশেল) ও গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি।তিন দিনের অবরোধে চট্টগ্রামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় তিন দিনের অবরোধে চট্টগ্রামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়

রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের প্রধান গেটের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জে দুটি ও কেরানীগঞ্জে একটি বাস পোড়ানো হয়েছে। বগুড়ায় একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ডভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আটটি ও ঢাকার সাভারে দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। সিলেটে যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর করা হয়। পাবনায় ১৫টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীর চানখারপুলে অবরোধের সমর্থনে বের করা মিছিল থেকে হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। একইদিন নারায়ণগঞ্জে আহত হয়েছেন আরও তিন পুলিশ সদস্য। তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রিফাত উল্লাহ (২২) ও একই ইউনিয়নের কৃষকদলের সভাপতি বিল্লাল মিয়া (২৮) নিহত হন। বিএনপির দাবি অনুযায়ী, তারা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একইদিন সিলেটে দিলু আহমদ জিলু (৪০) নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বিএনপির দাবি- পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় পড়ে আহত হন। পরে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু পুলিশ বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অবরোধের তৃতীয় দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা

মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পুলিশ গুলি ছুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ১ নভেম্বর রাত ১২টা থেকে ২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত ৮টি আগুনের সংবাদ পায় তারা। এরমধ্যে ঢাকায় চারটি, ময়মনসিংহের কেন্দুয়ায় একটি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও ফেনীতে দুটি, নারায়ণগঞ্জ একটি আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক পুড়ে যায়।

অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও গুলির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। দ্বিতীয় দিন বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীতে অন্তত ছয়টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর মুগদা, শ্যামলী, ভাটারা, নতুনবাজার, কাফরুল, শাহবাগ ও কালশী এলাকায় ছয়টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী ট্রেনে পেট্রোল বোমা হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিলে চালক মোজাম্মেল হক দগ্ধ হন। দ্বিতীয় দিনও বগুড়ায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোমরপুর বাহিরদিয়া সেতুর কাছে বিএনপি মিছিল বের করলে গুলির ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ডে একটি রডবাহী লরিতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে আগুনে লরিটির সামনের অংশ পুড়ে যায়। রাঙ্গুনিয়ায় আগুন দেওয়া হয় দুটি ট্রাকে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকায় কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করে। ২ নভেম্বর ৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল। অবরোধের তৃতীয় দিনে চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়

সারাদেশে যত আগুনসন্ত্রাস

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের সিনিয়র স্টেশন অফিসার তালহা বিন জসীম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ৬টা (৩ দিন) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার ৩৪টি আগুন দেওয়ার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে রাজধানীতে ১২টি, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে সাতটি, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলি, রাঙ্গুনিয়া, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় আটটি, বগুড়া ও রায়গঞ্জে চারটি, রংপুর বিভাগের পার্বতীপুরে একটি, বরিশালের চরফ্যাশনে একটি, ময়মনসিংহের কেন্দুয়ায় একটি আগুনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৮টি বাস, চারটি কাভার্ড ভ্যান, পাঁচটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল, দুটি বাণিজ্যিক পণ্যের শো রুম, একটি পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, দিনের চেয়ে রাতেই বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই তিন দিনে ৩৪টি আগুনের ঘটনার মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৯টি এবং বাকি ১৫টি দিনের অন্যান্য সময় সংঘটিত হয়েছে। দিনের বেলায় সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বেশি আগুন দেওয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত (৫ দিন) উচ্ছৃঙ্খল জনতা ৮২টি স্থানে আগুন দেয়। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি ও ২ নভেম্বর আটটি আগুনের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিস্থান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা

বিএনপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে (বৃহস্পতিবার) ২ নভেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। মামলা দিয়েছে ৪৮৯টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৪০ জনকে। বিভিন্ন ঘটনায় তাদের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন ৫৭৬৯ জন।

বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতর থেকে কোনও হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। কত গ্রেফতার ও মামলা হয়েছে সেই তথ্যও তারা দিতে পারেনি।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী থেকে দুই হাজার ১১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ কদিনে সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয় ৬৬টি। গ্রেফতার করাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা রয়েছেন।

/এমএস/
সম্পর্কিত
শাহবাগ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা 
ট্রাকচাপায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু, গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুরে ইমাম হত্যা: চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার ২১, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
সর্বশেষ খবর
দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ফরম্যাটের কোচ কনরাড
দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ফরম্যাটের কোচ কনরাড
শাহবাগ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা 
শাহবাগ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা 
মা দিবস উপলক্ষে কোথায় কী আয়োজন জেনে নিন
মা দিবস উপলক্ষে কোথায় কী আয়োজন জেনে নিন
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ও আ.লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে যা বললেন আইন উপদেষ্টা
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ও আ.লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে যা বললেন আইন উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান