দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নগর দরিদ্রবান্ধব নির্বাচনি ইশতেহার প্রদানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডেজিনাস নলেজ (বারসিক)। নগর দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্য কমানোর জন্য নির্বাচনি ইশতেহারে ৬ দফা দাবি যুক্ত করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে ‘নগর দরিদ্রবান্ধব নির্বাচনি ইশতেহার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এ দাবি জানায়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকা বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ২৩ হাজার ২৩৪ জন এবং বস্তিতে এই ঘনত্বের হার আরও অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সালে ঢাকা হবে বিশ্বের ষষ্ঠ মেগাসিটির শহর।
তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, কাজের সংকটসহ নানাবিধ কারণে প্রতি দিন ১৫০০-১৮০০ মানুষ ঢাকা শহরে আগমন করে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এদের বেশিরভাগ মানুষের স্থান হয় ঢাকা শহরের অনিরাপদ, ঘিঞ্জি, ঘনবসতিপূর্ণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ অবাসনসহ সব ধরনের নাগরিকসেবা বঞ্চিত বস্তি এলাকায়। এখানে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, সামাজিক নিরাপত্তাসেবা পরিষেবাসহ নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান।
আলোচনা সভায় আরও বলা হয়, যে জলবায়ু সংকট তাদের বাস্তুচ্যূত করে উদ্বাস্তু করেছে— এই নগরে এসেও তারা জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। নগরের বস্তি এলাকায় বসবাসরত এই নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবারও জলবায়ু পরিবর্তনের নানা নেতবিাচক প্রভাবের ফলে দুর্ভোগ সামাল দিচ্ছেন। গ্রীষ্ম ও শীতকালে তীব্র তাপদাহ, শৈতপ্রবাহ, বর্ষা, জলাবদ্ধতা সামাল দিতে হয়। এর ফলে তাদের রোজগার কমে যায়, কর্মসংস্থানে সমস্যা দেখা দেয়, বিভিন্ন রোগবালাই বেড়ে যায়।
সব মিলিয়ে পারিবারিক ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা ঋণ করতে বাধ্য হন। এর বাইরে বস্তি উচ্ছেদ, আগুনে বস্তি পুড়ে যাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করার কারণে পরিবারের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে তারা অনিশ্চিত জীবন পার করতে থাকেন। তাই নগর দারিদ্র এবং সামাজিক বৈষম্য কমানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ৬টি দাবি যুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ছয় দফা দাবি
১. নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ২. নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ও সহজভাবে পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. নগর দুর্যোগকে বিচেনায় নিয়ে নগর দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ভাতা, প্রণোদনাসহ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ৪. বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষার জন্য সরকারি স্কুলের ব্যবস্থা করতে হবে। ৫. গ্রামের স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মতো শহরের বঞ্চিতদের ক্লিনিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. বস্তি এলাকায় পরিকল্পিত বর্জ্যব্যবস্থা, বর্জ্য থেকে সম্পদ রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সান-ইয়াতের সভাপতিত্বে ও বারসিকের পারিচালক পাভেল পার্থের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— পরিবেশ অধবদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, সাংবাদিক নিখিল ভদ্র, বারসিকের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।