বিজয় দিবসের সাধারণ ছুটি ঘিরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ শব্দে হিন্দি গান বাজিয়ে ডিজে পার্টি, সড়ক বন্ধ করে ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আর টুর্নামেন্টের নাম করে দোকানে দোকানে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরান ঢাকার অনেক বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও আশেপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করেন, বিজয় উদযাপনের নাম করে ডিজে পার্টির এই অপসংস্কৃতি ও টুর্নামেন্টের নাম করে সড়ক বন্ধ করে চাঁদাবাজি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এই সব অপরাধ অপকর্ম ও অপসংস্কৃতি থেকে এই প্রজন্মকে উদ্ধার করে বিজয় উদযাপনের আসল পন্থা জানানো উচিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল আটটা থেকে রাত এগারোটা অবধি পুরান ঢাকার কলতাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শিংটোলা, টায়ারপট্টি, ধোলাইখালসহ প্রায় প্রতিটি অলিগলি ও মূল সড়ক বন্ধ করে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ১৬ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান-বাজনা চলেছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
আফরোজা আক্তার নামে পুরান ঢাকার একজন বাসিন্দা বলেন, কাল রাত থেকেই চলছে ডিজে পার্টি। একেবারে সহ্য লাগছে। দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরও শব্দ কমছে না। বিজয় দিবস কিন্তু চলছে হিন্দি আর ইংরেজি গান। শব্দের তীব্রতা এতটা যে রুমের দরজা কাঁপছে। বাচ্চারা ঘুমাতে পারছে না।
বিজয় দিবসের এমন উদযাপন নিয়ে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। বিরক্তির স্বরে মেসে থাকা সামিয়া আক্তার নামে কবি নজরুল কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে এ কেমন বিজয় উদযাপন! বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস যে দিবসই হোক ডিজে পার্টি হবেই। ডিজে পার্টির এই অদ্ভুত সংস্কৃতি খুবই বাজে। চারদিকে এত আওয়াজ ঠিকমতো পড়া যায় না, ঘুমানো যায় না।
আবুল হোসেন নামের একজন পথচারী বলেন, সারাদিন ধরে সড়ক বন্ধ। অলিগলি বন্ধ করে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। সীমানা বেঁধে দিয়েছে এটার মধ্যে কেউ আসতে পারবে না। আমরা যারা নিয়মিত এখান দিয়ে চলাফেরা করি তারা একটা বিপদে পড়েছি। মেইন রোড আটকে এসব করা হচ্ছে। আর উঁচু শব্দে সারাদিন গান বাজিয়ে চলছে। কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ একাজ করতে পারে না। কিছু বলাও যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলতাবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এই এলাকার প্রতি দোকানদার থেকে ৫০০ করে টাকা নিয়েছে। টাকা না দিলে দোকানদারি করতে দিবে না। স্থানীয় ছেলে দেখে কিছু বলার সুযোগ নেই। তাছাড়া এই এলাকায় ব্যবসা করি, তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিলাম।
আরেকজন দোকানদার বলেন, সকালবেলা আমি দোকান খুলছিলাম। চার পাঁচটা ছেলে এসে বললো টাকা দেন আমরা টুর্নামেন্ট ছাড়ছি। তাদের বললাম এখন না পরে আইসো। তারা আমারে ধমক দিলো, পরে আসতে পারবো না। আমি তখন একটা টাকাও বিক্রি করি নাই। পকেট থেকে দুই'শ টাকা বের করে দিলাম, আমার মুখের দিকে টাকা ছুঁড়ে ফেলে বলে ভিক্ষা নিতে আসি নাই পাঁচশো টাকা দেন। তাদের উগ্র আচরণ দেখে আমি আর কথা বাড়াইনি, পাশের দোকান থেকে টাকা এনে দিয়েছি।
তবে টুর্নামেন্টের নাম করে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজকরা। কলতাবাজারে মোক্তার হোসেন নামে ফুটবল টুর্নামেন্টে আয়োজক কমিটির একজন সদস্য বলেন, কাউন্সিলর সাহেবের অনুদানে প্রতিবছর আমরা পাড়ার ছেলেদের নিয়ে এসব আয়োজন করি। কেউ কখনও বলতে পারবে না আমরা কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নিয়েছি। উচ্চ স্বরে গান-বাজনার ব্যাপারে এই আয়োজক আরও বলেন, উৎসব তো সবসময় হয় না, বছরে হাতেগোনা কয়েকদিন হয়। সবাই মজা করে, কাউরে তো নিষেধ করবার পারি না।