বৈশ্বিকভাবে অভিবাসন ক্রমাগত স্পর্শকাতর, বিতর্কিত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মাইগ্রেশন, মোবিলিটি ও ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এই প্রথমবারের ইউরোপের নীতি-নির্ধারক ও রাজনীতিবিদরা বলছে যে, অভিবাসন খারাপ জিনিস এবং আমরা সেসব মানুষকে চাই না, যারা আমাদের মতো না। আমাদের মতো ব্যবহার করে না এবং যারা আমাদের ধর্মে বিশ্বাস করে না।’
তিনি বলেন, ‘অপরদিকে ইউরোপের বাজারে অভিবাসীদের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, ওখানে বয়স্ক লোকদের স্ংখ্যা বাড়ছে এবং অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে ইউরোপ অনেক উদ্বাস্তু গ্রহণ করতো, কিন্তু এখন সেটি হচ্ছে না।’ ফলে তাদের ওখানে কাজ করার লোক কমছে বলে তিনি জানান।
শহীদুল হক বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে অভিবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সবদেশ একমত হয়েছিল। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকা ওই জায়গা থেকে সরে এসেছে। তারা নতুনভাবে একটি নীতির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু এটি কাজ করছে না। কারণ, এটি বাস্তবতার নিরিখে করা হয়নি।’
কোভিড ও সংঘাত পরবর্তী বিশ্বের জন্য অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইউরোপের বুঝতে হবে যে, কেন মানুষ ওই মহাদেশে যেতে এত আগ্রহী। তারপর তারা এ বিষয়ে একটি নীতি করতে পারবে।’
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসের উপপ্রধান বার্ন্ড স্পেনিয়ার বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ইউরোপের মনোভাব পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ, সেখানকার মানুষের এ বিষয়ে সন্দেহ বাড়ছে।’
ইউরোপে এখন যারা সরকার গঠন করছে, তারা আগের মতো অভিবাসন-বান্ধব নয় এবং এটিই বাস্তবতা। অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি আচরণ আগের থেকে অনেক বেশি কঠোর হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বার্ন্ড স্পেনিয়ার বলেন, ‘অপরদিকে ইউরোপে এখন বিভিন্ন খাতে কাজ করার জন্য প্রচুর মানুষের প্রয়োজন। ইউরোপে এখন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। বয়স্ক মানুষদের দেখভাল করার জন্য প্রচুর লোকের দরকার। একইসঙ্গে শিল্পে কাজ করার জন্যও শ্রমিক দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমি একজন জার্মান এবং যদি জার্মান গাড়ির কারখানার দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো— সেখানে প্রকৌশলীর অভাব রয়েছে। তাদের দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। শ্রমিক সংকটের ভয়াবহতা পুরোপুরি আমরা অনুধাবন করতে পারছি না।’ কিন্তু আমার মতে, ওই জায়গায় আমরা দ্রুতই পৌঁছে যাবো বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যেটি দরকার সেটি হচ্ছে— দক্ষ মানুষ এবং তারা যদি ইউরোপে আসে, তবে তাদেরকে গ্রহণ করা হবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালি ও গ্রিসের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি— গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি করার জন্য এবং এটির নাম হচ্ছে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ। এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দেবো, যাতে করে তারা ইউরোপে কাজ করতে পারে বলে তিনি জানান।