সংসদে আওয়ামী লীগ সরকারের শক্ত কোনও বিরোধী দল নেই। বিরোধী দল না থাকলে যেকোনও সরকার স্বৈরাচারী হবে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য জাতীয় সংসদের বাইরে নির্মূল কমিটি ও সমমনা যত নাগরিক সংগঠন আছে, সবাই মিলে সরকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সংবিধানের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার নাগরিক আন্দোলন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্ব ও সংগঠনটির আইটি সেলের সভাপতি আসিফ মুনীরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির আইটি সেলের সদস্য সচিব তপন পালিত।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শমী কায়সার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ।
শাহরিয়ার কবির বলেন, সরকার যা খুশি তা-ই করবে, সেটা আমরা হতে দেবো না। আমরা উন্নয়নের পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পক্ষে। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা প্রয়োজন করবো। তবে বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে বাদ দিয়ে এটা করতে গেলে আমরা বিরোধিতা করবো।
মানবাধিকার নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক আহ্বান করে তিনি বলেন, ঠিক যেভাবে আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করাই আগামী দিনের আন্দোলনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন সব সময় বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ রাষ্ট্রের উন্নতির লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার কাছে রাষ্ট্রীয় কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করার প্রত্যাশা করেন।
বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কোনও রাজনৈতিক সংস্থা নয়। তবু এটি এমন সব কাজ করতে পেরেছে, ফলে এর সাফল্যের হার অনেক বেশি। এই সংঠনের একান্ত প্রচেষ্টার ফসল হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া চালু করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এত জোরালো হয়েছিল যে আওয়ামী লীগও তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া ঘোষণা করেছিল।
নির্মূল কমিটির কর্মক্ষেত্র শুধু যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যেই সীমিত থাকেনি জানিয়ে তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ তত্ত্ব কার্যকর রাখার দাবি তারা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নির্মূল করতে এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নির্মূল কমিটি কাজ করে যাবে বলে আশা করেন তিনি।