ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমন্বিত কোর্সে (লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি জমা দিয়েছেন একই বিভাগের ২৮ শিক্ষার্থী।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্যের কাছে এই চিঠি জমা দেওয়া হয়। অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে মৌখিক পরীক্ষা আবার গ্রহণ, সম্পূর্ণ ফলাফল পুণর্মূল্যায়ন এবং অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ‘কৃতকর্মের’ জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
নম্বর কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের নভেম্বরে তাদের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের কোর্স সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সমন্বিত কোর্সের প্রথম পরীক্ষকও ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ওই কোর্সের মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডেও তিনি ছিলেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সেই পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলে প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন ছয় জন। তাদের মধ্যে সমন্বিত কোর্সে মাত্র একজন ২.৭৫ গ্রেড পয়েন্ট পেয়েছেন। অন্যরা এরও নিচে (২.৫০) পেয়েছেন। সমন্বিত কোর্সে এমন ফল বিপর্যয় এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভাইভায় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে ফেলেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যাচ্ছিল। শিক্ষার্থী শাফাত রহমানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান কতজন?’ অন্য এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কুকুরের কয়েকটি জাতের নাম বল’। এ ধরনের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে তিনি অন্য পরীক্ষকদের সামনেও শিক্ষার্থীর ‘ইম্প্রেশন’ খারাপ করে দেন। এরই প্রতিফলন ঘটেছে সমন্বিত কোর্সের নম্বরে।
এবিষয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বলেন, ভাইভায় এমন কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। ক্লাসে কোনও একসময় পড়াতে গিয়ে কুকুরের জাত বিষয়ে বলা হয়েছিল। তবে ভাইবায় কখনোই এমন প্রশ্ন করা হয়নি।
অভিযোগপত্রে নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ‘ফেসবুকে নজরদারি’ ও ‘ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম অনুসরণ করে মূল্যায়নের’ কথা উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে নাদির জুনাইদ বলেন, ফেসবুকে নজরদারির এমন কোনও বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলিনি। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে শুধু বলেছি তোমরা ফেসবুকে সময় ব্যয় করতে পার, তাহলে ভালো ভালো ছবি কেন দেখো না।
ফলাফল কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বলেন, ভাইভায় আরও তিন জন ছিলেন। তারাও এখানে নম্বর দিয়েছেন। আমি একা নম্বর দেইনি। সবার নম্বর গড় হয়ে তারপর মোট নম্বর হয়।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখি। সংশ্লিষ্ট যারা এ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা ডাকবো। পরীক্ষা কমিটিসহ সবাইকে আমরা ডাকবো। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে উপাচার্যকে প্রতিবেদন দেবো। বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই না আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক। তারা যে নম্বর পেয়েছে, তা কতখানি যৌক্তিক সে বিষয়টিও আমরা দেখবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। ইতোমধ্যে উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে অভিযোগপত্রটি ফরওয়ার্ড করেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন।