অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দেশবরেণ্য কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নতুন বই 'সিলেক্টেড পোয়েমস’-এর তৃতীয় সংস্করণ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রুব এষ।
দ্বিভাষিক এই কাব্য সংকলনটি ইংরেজি ভার্সন নতুন করে সম্পাদনা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দুই কবি জেমি প্রক্টর শু ও সাইমন জে অর্টিজ। আগের সংস্করণের সঙ্গে ৩০টি নতুন অনুবাদ যুক্ত করা হয়েছে বর্তমান সংস্করণে। ভাষা ও সাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহাম্মদ সামাদের এই কাব্য সংকলনটি নিঃসন্দেহে পাঠককে আনন্দ দেবে।
এ ছাড়া অনন্যা প্রকাশনীতে 'মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’, ‘আমার কবিতা ভ্রমণ ও অন্যান্য, চেঞ্জিং ফেমিলি প্যাটার্নস অব বাংলাদেশ' এবং মাওলা ব্রাদার্সে তার ‘প্রেমের কবিতা', ‘জার্নিম্যানে সোশ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টিভিটিজ অব রিলিজিয়াস ইনস্টিটিউশনস ইন বাংলাদেশ', 'আমি তোমাদের কবি’ প্রভৃতি বই পাওয়া যাচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ সামাদ ১৯৫৬ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একজন রাজনৈতিক নেতার মেনিফেস্টো ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় এবং সে বছরই ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করে। প্রধানত ১৯৭৫ পরবর্তী রাজনীতিকে উপজীব্য করে অদম্য তারুণ্যে কাব্যযাত্রা শুরু হয় মুহাম্মদ সামাদের।
সত্তর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে মুহাম্মদ সামাদের কবিতা ও প্রবন্ধ জাতীয় পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। কবিতা, কাব্যানুবাদ, বঙ্গবন্ধু, সমাজ উন্নয়ন ভাবনা ইত্যাদি মিলিয়ে তার মোট প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩১টি। তার মধ্যে কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৩। তার কবিতা ইংরেজি, সুইডিশ, গ্রিক, চীনা, সার্বিয়ান, হিন্দি, সিনহালি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
মুহাম্মদ সামাদ কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রিত হয়ে ভারত, সুইডেন, নরওয়ে, ইতালি ও চীন সফর করেন। এ ছাড়া করোনাকালে আফ্রিকার দেশ ইসুয়াতিনি (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড) ও লেসেথোতে আন্তর্জাতিক অনলাইন কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে কবিতাপাঠে অংশ নেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কবি মুহাম্মদ সামাদের আন্তরিক ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে তার উজ্জ্বলতম কাব্যপঙক্তি— ‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’— ১৯৮৩ সাল থেকে দেয়াল, পোস্টার ও ব্যানারে খচিত হয়ে আসছে। কবিতা ছাড়াও বাংলা এবং ইংরেজিতে মুহাম্মদ সামাদের গবেষণাপ্রবন্ধ, গবেষণাগ্রন্থ ও লেখালেখি দেশে-বিদেশে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২৪ সালে একুশে পদক, ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট পয়েট পুরস্কার (২০১৮), সিটি আনন্দ-আলো পুরস্কার (২০১৭), কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার (২০১৭), সাহিত্য একাডেমি সম্মাননা, সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (২০১৭), কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, (২০১৭), প্রথম আলো পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত (২০১৬), কবিতালাপ পুরস্কার (২০১৫), সৈয়দ মুজতবা আলী সাহিত্য পুরস্কার, (২০১১), কপোতাক্ষ সাহিত্য পুরস্কার (২০১০), কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত; (২০০৮), কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার (২০০১), ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩) পেয়েছেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ সামাদ ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।