বুয়েটের ২০০৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যু ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তার পরিবার। চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা জানান। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দোষী চিকিৎসকদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান রাজীব আহমেদের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল।
সংবাদ সম্মেলনে সারাওয়াত ইকবালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান। তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে রাজীব শমরিতা হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নতুন ওষুধ সেবন শুরুর করার নয় দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে রাজীব ডা. কবীর চৌধুরীর নির্দেশে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন। কবীর চৌধুরী শমরিতা হাসপাতালের একজন পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, শমরিতায় রাজীবের অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাওয়ায় এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ায় এক দিন পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শমরিতায় রাজীবের শিরাপথে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্কয়ারে ৮টি অ্যান্টিবায়োটিকসহ ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং চারটি অ্যান্টিবায়োটিক কিডনি সংশ্লিষ্ট বিষক্রিয়ায় বোধহয় রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে।
উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলাকালীন অব্যবস্থাপনা ছিল এবং কালক্ষেপণ করা হয়েছে অভিযোগ করে নবী নেওয়াজ বলেন, শমরিতায় লিভার এনজাইমগুলোর মাত্রা অনেক বেশি থাকার পরও তারা লিভার ফেইল্যুরের ডায়াগনোসিসকে আড়াল করে অন্য ডায়াগনসিস উল্লেখ করে। স্কয়ার হাসপাতালে শুক্রবার রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরও কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিদর্শনে আসেননি।
অভিযোগ বলেন, চিকিৎসকদের কাছে রাজীবের অবস্থা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বারবার ধৈর্য ধরে বিশ্রামের কথা বলেছেন। অথচ রাজীবের পরিস্থিতি তখন লিভার ফেইল্যুর থেকে অন্যান্য অর্গান ফেইল্যুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এই সম্ভাব্য পরিণতির কোনও আভাসই চিকিৎসকরা রাজীবকে আইসিইউতে নেওয়ার আগে তার পরিবারকে জানাননি।
রাজীবের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল বলেন, ডা. কবীর চৌধুরী একসঙ্গে তিনজন বা দুজনকে দেখেন সব সময়। রাজীবের প্রকৃত অবস্থা আমাদের আগে যথাযথভাবে জানানো হলে আমরা তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দাবি, এই মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা হোক।
রাজীবের ছোট বোন তানিয়া শবনম বলেন, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় আমার ভাই মারা গেছেন। আমি চাই দোষীদের বিচার হোক, যাতে আর কোনও সন্তান এভাবে তার বাবাকে না হারায়, কোনও বোন তার ভাইকে না হারায়।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি মাহমুদুল ইসলাম জগলুল বলেন, আমরা আশা করি এ ঘটনার সুবিচার পাবো। যদি তা না করা হয়, আমরা প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো। এ বিষয়ে বিএমডিসি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুবিচার করবেন বলে আশা রাখি।