সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কোল ঘেঁষে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ‘আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার’। সুন্দরবনের পাশে চুনা (খোলপেটুয়া) নদীর তীরে ২৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম এই পর্যটনকেন্দ্র। উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়িতে অবস্থিত এই পর্যটনশিল্প বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
জীবনানন্দ দাশের ‘সুরঞ্জনা’খ্যাত ‘আকাশলীনা’ কবিতার নামে এই রিসোর্টের নামকরণ করা হয়। বছর দশেক আগে ২০১৬ সালে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এই ট্যুরিজম স্পটটি গড়ে তোলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক এখানে সুন্দরবনের প্রকৃতি উপভোগ করতে আসেন। দর্শনার্থীদের পদচারণে সব সময়ই মুখর থাকে এলাকাটি। ছুটির দিনে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
কিন্তু এখানে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় পর্যটকদের। কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও সঠিকভাবে প্রশাসনিক তদারকি না করার কারণে বিপাকে পড়ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। কারণ এই পর্যটনকেন্দ্রের শুরু থেকে শেষ অংশ পর্যন্ত অধিকাংশের মাচা বেশ নড়বড়ে। কিছু জায়গা ভাঙা। ফলে মাঝেমধ্যেই বেকায়দায় পড়তে হয় দর্শনার্থীদের।
এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্রে আরেক প্রধান সমস্যা হচ্ছে শৌচাগার। এখানে কেবল দুটি শৌচাগার আছে, তা-ও নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। বলা চলে ব্যবহারের অনুপযোগী। শৌচাগারের বেহাল দেখে অনেক দর্শনার্থী তা ব্যবহার না করেই ফিরে আসেন।
আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে ঘুরতে আসা ফারিন নামের এক দর্শনার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাতক্ষীরার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। পরিবার নিয়ে এখানে অনেকেই ঘুরতে আসেন। আমিও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখানে চলাচল করার জন্য কাঠের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ভেঙে যায়। পাশের বেশ কিছু রেলিং ভেঙে গেছে। কয়েক জায়গায় কাঠ নেই, ফাঁকা জায়গা।
শৌচাগারের বেহাল উল্লেখ করে এই দর্শনার্থী বলেন, সবকিছুর সৌন্দর্যের সঙ্গে শৌচাগারের সৌন্দর্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটা জায়গায় সবকিছু ঠিক কিন্তু শৌচাগার যদি ঠিক না থাকে, তাহলে পর্যটকরা অসন্তুষ্ট হন। এই ট্যুরিজম সেন্টারে সেই অবস্থা দেখা যায়। ফলে এখানে ঘুরতে এসে যারা জরুরি কাজ সারতে শৌচাগারে যায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় ধরে দর্শনার্থীদের শৌচাগারগুলোর এই অবস্থা। দায়িত্বরতদের বলার পরও তারা এদিকে কর্ণপাত করেনি।
এ বিষয়ে আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টারের সুপারভাইজার রবীন্দ্র আকাশ বলেন, যেই কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, তা বেশ শক্ত। কিন্তু জোয়ারের পানিতে ডুবতে ডুবতে কিছু জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে কিছু জায়গা ভাঙাও আছে। আমরা সেগুলো বেশ কয়েকবার মেরামত করেছি। রেলিং কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় ছিল, সেটাও ঠিক করা হয়েছে। নতুন করে রেলিং দিয়েছি। এখন যেসব জায়গা ভাঙা বা নড়বড়ে, প্রয়োজন হলে সেগুলো আবার মেরামত করা হবে।
শৌচাগারের বেহাল অবস্থার বিষয়ে এই সুপারভাইজার বলেন, দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলে মাঝেমধ্যে নোংরা হয়ে যায়। অনেকে ওয়াশ রুম ব্যবহার করার পর তা ঠিকমতো পরিষ্কার করে না। ওভাবেই রেখে যায়। পরে অন্য কেউ গেলে বিব্রত হন। তবে আমাদের স্টাফরা কয়েক দিন পরপর পরিষ্কার করেন। আর কিছুদিন পর নতুন শৌচাগার উদ্বোধন করা হলে সংকট নিরসন হবে বলেও জানান তিনি।
আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম রাতুলের সঙ্গে। এত টাকা বিনিয়োগের পর তদারকি কেন হচ্ছে না, এমন প্রশ্নে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। আপনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে সমস্যার কথা যেহেতু বলেছেন, আমরা নিশ্চয়ই এর সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শৌচাগারের বিষয়ে ইউএনও বলেন, নতুন শৌচাগার হচ্ছে। উদ্বোধন হলেই শৌচাগারের সমস্যা চলে যাবে। আর অন্য যেসব সমস্যা আছে সেসব বিষয়ে আমার জানা নেই।
আকাশলীনার প্রশাসনিক অবহেলা ও সুষ্ঠু তদারকির বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার ফোন করলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
.