X
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘বিপদ কাটাতে’ দান

মুফতি সাদেকুর রহমান
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১০আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:১০

পার্থিব জীবনকে সাজাতে মানুষ সংগ্রাম করে, সাধনা করে। বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে শেষ সময় পর্যন্ত। তবুও বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, পড়তে হয় দুর্ঘটনাতেও। এতে কেউ জীবনের ইতি টেনে পরকালে পাড়ি জমায়, আবার কাউকে কাউকে বাকি জীবন কাটাতে হয় অব্যক্ত বেদনায়। মুসলিমরা মনে করেন, বিপদাপদ মানুষের জীবনে আসে হয়তো তার গুনাহ ও মন্দ কর্মের শাস্তি স্বরূপ অথবা মহান রবের পরীক্ষা স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে, তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন (সূরা শূরা)।’

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা ধন ও জনের ক্ষতি, ফল- ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের (সূরা বাকারা ১৫৫)।’

দান-সদকার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়। দানকারীর জন্য বিপদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। যার ফলে বিপদাপদ দানকারীকে স্পর্শ করতে পারে না। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অতিসত্বর দানের দিকে ধাবিত হও, কেননা বিপদাপদ দানকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৩০৮২; আত তারগিব : ১২৯৯)

দান-সদকা দানকারী ব্যক্তিকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪; ইবনে হিব্বান : ৩৩০৯)। 

‘অপমৃত্যু বলতে ওইসব মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে যা থেকে স্বয়ং নবীজি (সা.) পানাহ চেয়েছেন। তা হলো পানিতে পড়ে, আগুনে পুড়ে, ওপর থেকে পতিত হয়ে, যুদ্ধ থেকে পলায়নরত অবস্থায় বা এ ধরনের কোনও কারণে মৃত্যুবরণ করা। হঠাৎ মৃত্যুকেও কেউ কেউ অপমৃত্যু বলেছেন।’ (মেরকাত : ৪/১৩৪১)

দানের মাধ্যমে যে বিপদ আপদ দূর হয় তাযকিরাতুল আম্বিয়া থেকে এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। হযরত সোলাইমান (আ.) সব প্রাণীর ভাষা বুঝতেন। একদিন এক পাখি এসে বিচার দিলো যে, ‘আমার বাসা থেকে অমুক ব্যক্তি ডিম নিয়ে যায়। যখনই আমি ডিম দিই, তখনই সে ডিম নিয়ে যায় এবং খেয়ে ফেলে!’

সোলাইমান (আ.) লোকটিকে ডেকে নিষেধ করে দিলেন যে, আর কোনদিন তার বাসা থেকে ডিম পারবে না! পরের দিনই ওই লোকটি হজরত সোলাইমানের (আ.) নিষেধ অমান্য করে ডিম খেয়ে ফেললো। পাখিটি বিরক্ত হয়ে আবারও হজরত সোলাইমানের (আ.) কাছে অভিযোগ করলো। এবার সোলাইমান (আ.) এক জিনকে নির্দেশ দিলেন— লোকটি যখন ডিম নিতে গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, যাতে লোকটি আর কোনও দিন গাছে চড়তে না পারে! যেই কথা সেই কাজ। জিন প্রস্তুত— ওই লোক আজ এলেই তাকে মাটিতে ফেলে দেবে, নিষেধ অমান্য করে ডিম খাওয়ার স্বাদ বোঝাবে।

পরের দিন লোকটি যখন পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল বাবা! কিছু সাহায্য দিন। ওই লোকটি ক্ষুধার্ত ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করলো। তারপর গাছে উঠলো। জিন আগে থেকেই প্রস্তুত। যখন জিন তার হুকুম পালনার্থে তাকে ফেলে দেবে ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে দুই দিক থেকে দুই ফেরেস্তা এসে ধরে ফেললো। লোকটি অনায়াসেই ডিম নিয়ে গাছ থেকে নেমে পড়লো।

পাখিটি এবার একটু নারাজ হয়েই সোলাইমানের (আ.) কাছে এসে বললো, ‘আপনি কী বিচার করেন। আজও আমার ডিম নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। সোলাইমান (আ.) সেই জিনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কী হুকুম দিয়েছিলাম, কেন তা পালন করলে না? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম এবং নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষাও করছিলাম। কিন্তু আমি যখনই তাকে নিক্ষেপ করার জন্য হাত বাড়ালাম। এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুজন ফেরেস্তা এসে আমাকে ধরে ফেললো। 

হজরত সোলাইমান (আ.) বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল— আমি দেখলাম, লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করলেন। সম্ভবত এর বরকতে আল্লাহপাক তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সোলাইমান (আ.) বললেন, ‘হ্যাঁ, সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। আর এ কারণেই সে তখন মহাবিপদ থেকে বেঁচে গেছে।‘

এ ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, দান সদকা মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে বাঁচায়। তাই আসুন দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সম্পদের শুকরিয়া আদায় করি। গরিব ও অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করি। সমাজের নিঃস্ব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই ও তাদের সাথে সুখ-দুঃখ সমানভাবে ভাগাভাগি করি। সর্বোপরি নিজেকে আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করি।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন র. দারুল কুরআন মাদ্রাসা চৌধুরীপাড়া, ঢাকা

/ইউএস/
সম্পর্কিত
নতুন নোট নেই, বিকল্প উপায়ে ঈদ সালামি
মাসব্যাপী সবার জন্য বিনামূল্যে ইফতার, প্রশংসায় ভাসছেন তারা
এবার রাজশাহীতে ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৮৫ টাকা
সর্বশেষ খবর
জার্মানিতে ছুরি হামলায় ১৭ জন আহত, নারী আটক
জার্মানিতে ছুরি হামলায় ১৭ জন আহত, নারী আটক
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় চলছে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা
ঈদুল আজহায় ট্রেনযাত্রাচট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় চলছে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা
কখন কী হয় এ নিয়ে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে: আসাদুজ্জামান রিপন
কখন কী হয় এ নিয়ে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে: আসাদুজ্জামান রিপন
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
মিষ্টি বিদেশি আঙুর চাষ হচ্ছে দেশে, রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
সর্বাধিক পঠিত
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাসনিম জারা ও উমামার ফেসবুক পোস্ট
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাসনিম জারা ও উমামার ফেসবুক পোস্ট
অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহে ছুরিকাঘাত
অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহে ছুরিকাঘাত
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ সেনাবাহিনীর
গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ সেনাবাহিনীর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিমানবন্দরে নামা মাত্রই আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, দাবি স্ত্রীর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিমানবন্দরে নামা মাত্রই আ.লীগ নেতা গ্রেফতার, দাবি স্ত্রীর
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: বিশেষ সহকারী
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: বিশেষ সহকারী