আমেরিকার প্রবাস জীবনের নানান গল্প নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন ‘সবাই গেছে বনে’। আর রাজধানী ঢাকার জীবন নিয়ে কেউ লিখতে চাইলে অন্তত এই কয়েক দিনের জন্য শিরোনাম হতে পারে ‘সবাই গেছে গ্রামে’। কর্মব্যস্ত এই নগরীর সবাই যখন ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন, তখনই এই ঢাকা হয়ে উঠেছে এক স্বস্তির শহর। বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র, নেই চিরচেনা রূপ। এখন আর ঢাকার সড়কে ঘণ্টা পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। মুহূর্তেই চলে যাওয়া যাচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
রমজানের শেষ দিন বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। কোথাও কোনও যানজট কিংবা সিগনাল নেই। হাতেগোনা দুয়েকটি সিটি বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা ছাড়া তেমন কোনও যানবাহনও নেই সড়কে।
ঈদকে কেন্দ্র করে সোয়া কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে সব অফিস-আদালত। তবে রাজধানীর অনেক বিপণি বিতানে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। ফলে মার্কেট এলাকাগুলোতে কিছুটা ভিড়ও আছে।
বুধবার (১০ এপ্রিল) আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, বিজয় সরণি, মহাখালী, তেজগাঁও, কাকরাইল, শাহবাগ, পুরান ঢাকা ও মতিঝিলসহ ঢাকার কয়েকটি সড়কে ঘুরে দেখা যায়, যানজটমুক্ত ফাঁকা ঢাকায় চলাচল করছেন নগরবাসী। ফাঁকা সড়কে কিছুটা গতি বাড়িয়েই চলছে যানবাহন। ইন্টারসেকশন ও সিগন্যালে যানবাহনে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও কোনও জটলা নেই। কিছু কিছু সড়কে তেমন গাড়িও চোখে পড়ে না।
কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে কথা হয় শিকড় পরিবহন বাসের চালক ফাহাদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, এমনি সাধারণ সময়ে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী একটা ট্রিপ মারতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগতো। কখনও কখনও আরও বেশি সময় লাগতো। আর এখন এই ফাঁকা ঢাকায় এক থেকে দেড় ঘণ্টায় একটা ট্রিপ দিচ্ছি।
বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মিজান বলেন, ‘এমন ঢাকা সারা বছর থাকলে আমাদের ভোগান্তি কম হইতো, আর সংসার চালানো নিয়াও টেনশন থাকতো না।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রী কম থাকলেও গাড়ি চালায়া মজা পাওয়া যাইতাছে। অন্যান্য দিন এত জ্যাম থাকে, দুই-তিনটার বেশি ট্রিপ মারা কঠিন।
ফাঁকা ঢাকায় যাত্রীরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন। শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে আসা জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমি খিলগাঁও থেকে শাহবাগে এসেছি মাত্র ১৫ মিনিটে। অন্য সময়ে লাগতো প্রায় এক ঘণ্টা। রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। ফাঁকা রাস্তায় দারুণ এনজয় করছি।
নগরীর আরেক বাসিন্দা সাদিয়া জাহান বলেন, ‘আমি সবসময় অপেক্ষায় থাকি কবে এমন ফাঁকা ঢাকা হবে। আমরা ঢাকায় বড় হয়েছি। ব্যস্ততম শহর আমাদের ভালো লাগে না। কোথাও যেতে চাইলে জ্যামের ভয়ে যাওয়া হয় না। যানজট, শব্দ ও বায়ুদূষণ অতিষ্ঠ করে তোলে। ঈদ উপলক্ষে কিছু দিন শান্ত শহর পাবো। এটাই আমাদের জন্য বড় আনন্দের।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিজয় সরণি, কাওরান বাজার কিংবা বাংলামোটর সিগন্যালের কথা শুনলে অনেকের গায়ে জ্বর আসে। আজ এসব সিগন্যালে কোনও জ্যাম নেই। কোনও যানবাহনকেও থামাচ্ছে না ট্রাফিক পুলিশ।’
ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সবুজবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নাহিদ ফেরদৌস বলেন, ‘শাজাহানপুর, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর এসব এলাকায় প্রচণ্ড গাড়ির চাপ থাকতো। আর আজকে চাপ দূরে থাক, তেমন যানবাহনও দেখা যাচ্ছে না।'
ডিএমপি রমনা ট্রাফিক বিভাগের শাহবাগ জোনের এসি শেখ মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, 'রাজধানীর অধিকাংশ বাসিন্দা ঈদ করতে গ্রামে চলে গেছেন। তাই ঢাকার মানুষের চলাচল স্বাভাবিকভাবে অনেক কম। যানবাহন বেশি না থানায় যানজটও নেই। তবে, ফাঁকা ঢাকায় যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এবং ছিনতাই কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।'