কোরবানির ঈদ মানে হাটে গিয়ে দামদর করে পশু কেনা। তারপর পশু বাড়ি এনে দুদিন লালন-পালন করে ঈদের দিন কোরবানি দেওয়া। এসব কাজ মোটেই সহজ নয়। আবার অনেকে আনন্দ নিয়ে পশু কোরবানির সব কাজ কষ্টসাধ্য হলেও তা সম্পন্ন করেন।
তবে এখন সব দায়িত্ব নিয়ে কোরবানির পশুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিকল্প উপায় আছে। তাই পশু কেনা থেকে শুরু করে তা কোরবানি করার সব দায়িত্ব তুলে দিতে অনেকে সহায়তা নেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের। এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা খামার থেকে অনলাইনে গরু পছন্দ করে সব সেবা নেন কোরবানিদাতারা।
জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান ঈদের আগ পর্যন্ত পশু লালন-পালন ও নিজ দায়িত্বে কোরবানি করে মাংস বাসায় পৌঁছে দেয়। এর বিনিময়ে পশুর দামের বাইরেও বাড়তি কিছু সেবামূল্য রাখে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে কথা হয় সাদেক অ্যাগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০১১ সাল থেকে অনলাইনে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করে সাদেক অ্যাগ্রো। ২০২০ সালে কোভিডের সময়ে অনলাইনে বিক্রি বাড়ে। ওই সালেই তারা পশু বিক্রির সঙ্গে ক্রেতাদের ঘরে বসে কোরবানি সেবা প্রদান চালু করেন। ২০২৪ সালের ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ পর্যন্ত অনলাইনে ৬৬টি গরু ও ১২৯টি খাসি কোরবানির সেবাসহ বিক্রি হয়েছে। কোরবানির জন্য আলাদাভাবে বাজারে প্রচলিত মূল্য হাজারে ১৫০ করে সেবা মূল্য রাখছেন বলে জানান তিনি।
ইমরান হোসেন আরও বলেন, অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরি এসেও অনেকে কোরবানির পশু কেনেন। তাদের মধ্যে অনেকে ঝামেলা এড়াতে আমাদেরই কোরবানি যাবতীয় দায়িত্ব দেন। আমরাও সেই অনুযায়ী কাজ করি। ক্রেতারা কেবল ঈদের দিন সকাল আসতে শুরু করেন। তাদের উপস্থিতিতেই গরু কোরবানি হয়। অনেকে নিজ হাতে কোরবানি দিতে চান। সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিই।
এই খামারি বলেন, অনেকে বিদেশ থেকেও অনলাইনে গরু কিনে আমাদের সব দায়িত্ব দেন। কারণ দেখা যায় তাদের বৃদ্ধ বাবা-মা থাকেন, তাদের এসব কাজ করা কঠিন। তখন আমরাই এগুলো করে মাংস বাড়ি পৌঁছে দিই। একেবারে ভুঁড়ি পর্যন্ত পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
শরিয়ত মোতাবেক কোরবানির সব কাজ সম্পন্ন হয় জানিয়ে ইমরান বলেন, আমাদের দুজন নিয়োগ করা ইমাম আছেন। তারা নামাজ পড়ে আমাদের এখানে আসেন। সারা দিনই থাকেন। এ ছাড়া আমাদের এখানে প্রায় ৫০ জন দক্ষ কসাই আছেন। স্টাফরাও সহযোগিতা করেন।
এদিকে বেঙ্গল মিটসর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিভিন্ন কোরবানির পশু, জাত, ওজন, আকার অনুযায়ী ভাগ করা। ক্রেতারা তা অনলাইন থেকেই পছন্দ করে। ঘরে বসে কোরবানির সুবিধা পাবেন।
সাদেক অ্যাগ্রো ও বেঙ্গল মিটস ছাড়াও সবুজ উদ্যোগ, নর্থ বেঙ্গল ডেইরিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিয়ে থাকে।
কথা হয় অনলাইন থেকে কোরবানির নানা সেবা গ্রহণ করা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তারা বলেন, একসময় পশু কিনে এনে রাখা ও কোরবানি করার মতো সময় ও লোকবল পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দক্ষ কসাই না পাওয়াটা বড় ঝামেলা। এ ছাড়া পশু কোরবানির পর এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এক জায়গায় পশু কেনা, রাখা ও কোরবানির মতো সব সুবিধা পাওয়ায় ঘরে বসে সেবা নিতে আগ্রহী বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে কথা বলেন মিরপুরের বাসিন্দা ইউনুস সিদ্দিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাবার সঙ্গে কোরবানির হাটে যাওয়া হতো আগে। এখন বাবার বয়স হয়েছে। তার হাটে যাওয়ার সেই আগ্রহও নেই। আমাদেরও সময় হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে বড় কথা গরু কিনে এনে রাখা, খাবার খাওয়ানো—এগুলো করার লোক পাওয়া যায় না। আবার ঈদের দিন ভালো কসাইয়ের একটা বড় সংকট থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া কাটাকাটি করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা মাথায় রেখে এখন খামার থেকেই গরু জবাই করে সেখান থেকেই সব সম্পন্ন করে মাংস বাসায় নিয়ে আসা সহজ। এতে নিজের কোনও চিন্তা করতে হয় না।