X
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৩ মাঘ ১৪৩১

আইনি প্রক্রিয়া শেষে কোটা সংস্কারের ইঙ্গিত তথ্য প্রতিমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ জুলাই ২০২৪, ২০:০১আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ২০:০১

কোটা সংস্কারের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় নির্বাহী বিভাগ এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দিলে তা অসাংবিধানিক হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সহনশীল, আমরা অনেক বোঝাচ্ছি। আমরা এখন পর্যন্ত সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আমরা বলছি যে আন্দোলনকারীদের দাবি এবং সরকারের অবস্থানের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এই মুহূর্তে আমাদের (নির্বাহী বিভাগ) হাত বাধা আছে। কারণ, এটা বিচারাধীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলাপ করতে পারেন, কথা বলতে পারেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ঘোষণা চাচ্ছেন, এটা হয় না, এটা অসংবিধানিক। গায়ের জোরে পাহাড় ঠেলায় এটা যৌক্তিকতা হারিয়ে ফেলবে, তখন কিন্তু আইনিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শনিবার (১৩ জুলাই) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে কোটা আন্দোলনসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না করে সরকার এ বিষয়ে কোনও কিছুই করতে পারবে না, সেটি আমরা সবাই জানি। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে সরকার আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দিতে পারে না। কমিশন গঠনসহ এসব বলার অর্থ আপনি অসাংবিধানিক কাজ করছেন।’

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে—নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। এই তিনটি অঙ্গ কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি পরিবর্তন করছে, একেকবার রাষ্ট্রের এক এক অঙ্গের কাছে দাবি জানাচ্ছে। এখানে তাদের সম্মুখ ধারণার অভাব আছে মনে হচ্ছে।’

প্রথমে কোটা আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে বাতিল করা সরকারের পরিপত্র পুনর্বহাল করার দাবি করেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘এটি পুনর্বহাল করার ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগের। হাইকোর্টের আদেশ রাস্তায় আন্দোলন করে পরিবর্তন করার কোনও সুযোগ নেই। রাস্তায় আন্দোলন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে, সেই সুযোগ হয়তো আছে। পরিপত্র বাতিলের কারণে সায়মিকভাবে কিছু ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে বা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আন্দোলনে নামার পেছনে যুক্তিকতা থাকতে পারে।’

তবে আন্দোলন করে এটি পরিবর্তন করা যাবে না উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তন করতে হলে সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিলও করেছে, আইনি লড়াই শুরু করেছে। তখন সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেলো। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগও করেছেন, সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্তও হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা পরে আবার পরিবর্তন করে সরকারের কাছে কমিশন গঠনের দাবি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার আপিল করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করায় কমিশন গঠনের সুযোগ নেই। এমনকি ঘোষণা দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, এটা অসাংবিধানিক। তারা সেই অসাংবিধানিক বাদী করতে শুরু করলো। এর মধ্যেই সরকারপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থার আদেশ আনতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল হয়ে গেছে। হাইকোর্টের আদেশে আর নেই, সেটিও বলা হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতের প্রাথমিক আদেশে আন্দোলনকারীদের দাবি চার সপ্তাহের জন্য পূরণ হয়ে গেছে।

সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, আন্দোলনকারীদের জন্য দরজা সব সময় খোলা থাকবে, এ কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ (সরকার) যখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মীমাংসার দিকে এগোচ্ছে, তখন আন্দোলনকারীরা আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করে বলতে শুরু করেছে, বিচার বিভাগ নয়, নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে সমাধান চাই। অথচ আইনি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ না করে সরকার এ বিষয়ে কোনও কিছুই করতে পারবে না। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে সরকার আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দিতে পারে না। কমিশন গঠনসহ এসব কলার অর্থ আপনি অসাংবিধানিক কাজ করছেন।

কোটা বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি আদালত বা সংসদের বিষয় নয়। সর্বশেষ হাইকোর্টের আংশিক রায়ে দেখা গেল, আদালত কোটা সংস্কারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তখন আন্দোলনকারীরা আবার দাবি পরিবর্তন করে বলছে, সংসদ বা আইনসভাকে আইন করতে হবে। প্রথমে আদালতের কাছে, তারপর নির্বাহী বিভাগের কাছে, এখন সংসদের কাছে দাবি।

আন্দোলনকারীরা বারবার কেন দাবি পরিবর্তন করছে, সেই প্রশ্ন রেখে আরাফাত বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, তারা কোনও বিষয় নিয়ে ভালোভাবে জ্ঞাত নয়। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে সরকারি পরিপত্র পুনর্বহাল হওয়ার পর, আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক পূরণ হওয়ার পর এবং তাদের মৌলিক দাবি ও সরকারের অবস্থা একই হওয়া সত্ত্বেও যারা বারবার দাবি পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং এখনো আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, আমি মনে করি তারা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনও দূরভিসন্ধি আছে।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী আছে। তাদের যে স্পিড অর্থাৎ তারা যে মেধার মূল্যায়ন চান, সেই স্পিডের সঙ্গে আমি একমত। মেধার মূল্যায়ন না হলে সমাজ-দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু মেধার মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা যদি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সুযোগ না দিই, তাহলে তো তারা বঞ্চনের শিকার হবেন।

পুরো বিষয়টা আন্দোলনকারীরা বুঝবেন আশা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুঝতে হবে এবং তাদের যে দাবিদার এবং সরকারের যে অবস্থান, সেটা মিলে গেছে। তারাও সরকারি পরিপত্র ফিরে চেয়েছে, সরকারও সেটার জন্য আইনি লড়াই করছে।

তিনি বলেন, আমার ধারণা কিছু মানুষ হয়তো এখানে তাদের বিভ্রান্ত করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে। রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ হলে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। কিন্তু বিষয়গুলোর মধ্যে যৌক্তিকতা থাকে। হাইকোর্ট যখন প্রথম সরকারের পরিপত্র বাতিল করলো, তখন তাদের মধ্যে একটা খুবই সঞ্চার হলো। তা বুঝে না বুঝে যেভাবেই হোক। রাস্তায় নামলো দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। ঘোষণা দিতে হবে, এ ধরনের অসাংবিধানিক দাবির কোনও সুযোগ নেই।

সর্বোচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সরকার কী করে, সেটি দেখার আহ্বান জানিয়ে আলী আরাফাত বলেন, তখন আন্দোলন করেন আলোচনা হবে। এখন তো আন্দোলনের কোনও বাস্তবতা আমি দেখি না। আলোচনার কোনও প্রয়োজন আমি দেখি না। একটা সাইলেন্ট মেজরিটি আছে। যে লোকজন জোর করে আন্দোলন করছেন, এটা অনেক মনে হয়, আসলে এখানেও একটা বিশাল সাইলেন্ট মেজরিটি আছে। তারা দুর্ভোগের শিকার হলেই এগুলা পছন্দ করে না। আন্দোলনের দায়িত্বে যারা আছে, জনদুর্ভোগের মধ্যে পড়বে, তাদের সেফটি সিকিউরিটি প্রোটেকশন দেওয়া সরকার আইন অনুযায়ী কাজ করবে সাংবিধানিকভাবে।

/এমআরএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
ইউল্যাবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো ‘হাল্ট প্রাইজ’
রাষ্ট্রকাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানগুলোর সম্পূর্ণ বিলোপ ঘটেনি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৬, ছেলের ১৮ করার দাবি
সর্বশেষ খবর
প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা জানালেন স্যাম জাহান
প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা জানালেন স্যাম জাহান
গভীর রাতে ৩২ নম্বরে জিয়াফত আয়োজন
গভীর রাতে ৩২ নম্বরে জিয়াফত আয়োজন
ন্যাশনাল ব্রেকফাস্টে অংশ নিলেন বিএনপির প্রতিনিধিদল
ন্যাশনাল ব্রেকফাস্টে অংশ নিলেন বিএনপির প্রতিনিধিদল
মধ্যরাতে শেখ সেলিমের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন
মধ্যরাতে শেখ সেলিমের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন
সর্বাধিক পঠিত
‘আমি স্তম্ভিত’
‘আমি স্তম্ভিত’
‘খুলনার আর কোথাও ভাঙচুর হলে এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন নেবে না’
‘খুলনার আর কোথাও ভাঙচুর হলে এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন নেবে না’
আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া, আহত ৩
আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া, আহত ৩
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা গ্রেফতার
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা গ্রেফতার
ধরুন, শিশুটি আপনার সন্তান
ধরুন, শিশুটি আপনার সন্তান