পাবনার ঈশ্বরদীর চররুপপুর নলগাড়ি এলাকায় চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত শাহানুজ্জামান সেনা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বালিবাহী একটি ট্রাকে হামলা চালিয়ে তা ভাঙচুর করা হয় এবং চালককে বেধড়ক মারধর করে তার পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী চালক ও গাড়ির মালিক ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রুপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নয়ন কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বালিবাহী গাড়িতে হামলা ও চালককে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বালু ব্যবসায়ী এনামুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় কৃষকদের পতিত জমি বৈধভাবে লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু বিএনপি নেতা পরিচয়ে শাহানুজ্জামান সেনা প্রকাশ্যে আমাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তার লোকজন নিয়ে আমাদের বালিবাহী গাড়িতে হামলা চালান গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং চালককে নির্মমভাবে মারধর করেন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
মারধরের শিকার বালিবাহী গাড়ির চালক তমাল বলেন, ‘আমি বালি নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথে চররুপপুরের নলগাড়ি এলাকায় হঠাৎ করে কয়েকজন লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার পথ আটকায়। কোনোকিছু বোঝার আগেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে। পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। পরে আমি মহাজনের সহায়তায় ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
আরেক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চাঁদা না পেয়ে সে (শাহানুজ্জামান সেনা) আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা মামলা ও ভুয়া সংবাদ সম্মেলনের আশ্রয় নিচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই আমরা যেন ভয় পেয়ে মুখ বন্ধ রাখি এবং তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কিছু না বলি।’
শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় চররুপপুরের নলগাড়ি এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলে ধরে জানান, স্থানীয় কৃষকদের পতিত জমি বৈধভাবে লিজ নিয়ে সরকার অনুমোদিত ইজারা থেকে বালি কিনে তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু সেই বৈধ ব্যবসার ওপর খড়্গ হয়ে নামেন স্থানীয় বিএনপি নেতা পরিচয়দানকারী শাহানুজ্জামান সেনা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেনা তার অনুসারীদের নিয়ে সরাসরি হামলায় চালিয়ে বালিবাহী গাড়ি ভাঙচুর, চালককে পিটিয়ে আহত করা এবং তার পকেটে থাকা টাকা লুট করার অভিযোগও এসেছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এটি শুধু একটি হামলা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ভয় দেখিয়ে তাদের ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত শাহানুজ্জামান সেনা অভিযোগগুলো সরাসরি অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সবকিছু সাজানো নাটক। বরং তারাই আমার জমি জবরদখল করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’