জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের মূল্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সে লক্ষ্যে অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বিগত সরকারের সৃষ্ট সিন্ডিকেট বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ী’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আরও উপস্থিত ছিলেন— জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কমকর্তাসহ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির সদস্যরা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, বিতর্কিক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়টি সময়োপযোগী। আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি উপভোগ করেছি এবং সমৃদ্ধ হয়েছি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফফতর অতীতের ধারাবাহিকতায় ভোক্তাদের অনুকূলে কিছু কাজ করছে— যার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন। তিনি বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাষ্ট্র হলো উত্তম কোনও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সমবায়।
মহাপরিচালক বলেন, আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুই পক্ষই যুক্তিসঙ্গতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। সুশাসনের ছয়টি উপাদানের বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুশাসন নিশ্চিত করতে সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে এবং দেশ ও জাতিকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে— এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর মানুষের অনেক আশা ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও রেগুলেটরি ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়েছে। ডিম, পেঁয়াজ, চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। ডিমের ওপর শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে— যেন অধিক আমদানির ফলে খামারিরা আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি না হয়। ভোজ্যতেল ও চিনির ওপরও আমদানি শুল্ক ও আবগারি কর কমানো হয়েছে। আমরা এনবিআরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু শুল্ক কমানোর পরও এর পুরোপুরি সুবিধা এখনো ভোক্তারা পাচ্ছে না।
আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার চিনি, গম, ভোজ্যতেলসহ ৫/৬টি পণ্যের ওপর এলসি'র মার্জিন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটি আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। তারা আসলে ব্যবসায়ী নয়, মুনাফালোভী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরণের সিন্ডিকেট ভেঙে সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযোগ প্রদান করা উচিত।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক ইকবাল আহসান এবং সাংবাদিক আতিকুর রহমান।