রাজধানীর মিরপুরে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা। মেলায় দেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্থানীয় বিভিন্ন খাবারের প্রদর্শনী ও বিক্রির আয়োজন করা হয়েছে। এসব খাবার মূলত অর্গানিক হওয়ায় শহরের মানুষের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় এ মেলার উদ্বোধন হয়। মেলা চলবে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা অর্গানিক খাবারের গুরুত্ব ও পাহাড়ি অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করেন। পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, শুধু অর্গানিক খাবার নয়, পাহাড়ি অঞ্চলের শস্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে হবে— যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর উপকার পায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, খাদ্য কেবল খাদ্য নয়, সাধুরা খাদ্যকে শরীর সেবা করা বলে থাকেন। আমরা যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই তাহলে আমাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এখন যে আধুনিক খাবারের নামে খাবার উৎপাদন করা হয়— কীটনাশক দিয়ে বীজটাও নষ্ট করে ফেলা হয়।
খাদ্যের নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তামাক চাষ এবং রাবার বাগান পাহাড়ি অঞ্চলের জমি নষ্ট করছে। এসবের পরিবর্তে স্থানীয় ফসল ও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা কাপ্তাই হ্রদে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছি— যাতে হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা যায়।
আয়োজক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, পাহাড়ি খাবারগুলো স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর। শহরবাসী যদি এগুলো গ্রহণ করে— তাহলে সুস্বাস্থ্য লাভের পাশাপাশি পাহাড়ি অর্থনীতিরও উন্নতি হবে।
খাবার শুধু দেহের পুষ্টির জন্য নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ভগবান বুদ্ধের পুরো জীবনব্যাপীতে আমরা বৃক্ষের প্রভাব দেখতে পাই। এদেশে ৭০ লাখ মানুষ না খেয়ে রাতে ঘুমাতে যায়। খাবারের যে ম্যানেজমেন্ট সেটা আমরা করতে পারি না। তাই আমাদের খাবার অপচয় রোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আদিবাসীরা তাদের জায়গা জমি এত সুন্দর করে রাখে— বাঙালি দখলদারদের সেদিকেই বেশি নজর দেয়। ভবন বানানোই কোনও উন্নয়ন নয়। গান যেমন ঐতিহ্য, তেমন বিভিন্ন ধান, শস্য আমাদের ঐতিহ্য। এগুলো সংরক্ষণ না করলে হারিয়ে যায়। এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিলিপ কুমার বলেন, ছোটবেলায় যে মাছটিতে মাছি বসে সেই মাছ না কেনার কথা বলা হতো। এখন যে মাছে মাছি বসে না, সেই মাছ না কেনার জন্য বলে। কারণ এত কেমিক্যাল ব্যবহার হয়— যে এখন আর মাছিও বসে না। এই বিপরীতমুখী অবস্থায় পাহাড়ি অর্গানিক খাবারগুলোর বিষয়ে শহরের মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে পারলে তারাও স্বাস্থ্যকর খাবার পাবে। আর একটা কেবল অর্থনীতি নয় কালচার ও মানবিক সম্পর্ক তৈরি হবে পাহাড় ও সমতলের মাঝে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মহা প্রজ্ঞা এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, শহরের মাঝে এই ধরনের আয়োজন পাহাড় ও শহরের জনগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের যে দূরত্ব ছিলো তা দূর হবে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা পাহাড়ি খাবার ও শস্যের বৈচিত্র্যে মুগ্ধ হয়েছেন। আয়োজকরা আশা করছেন, এ আয়োজন শহরবাসীর খাদ্যাভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।