গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের সময় এলাকাবাসীর হামলায় আহত সাত জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে আনা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গাজীপুর থেকে আহত অবস্থায় সাত জনকে ঢামেকে আনা হয়েছে। তাদের ছয় জনকে ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর একজনকে কিছুক্ষণের মধ্যে আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে।
পরে দুপুরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, গাজীপুর থেকে শুক্রবার দিবাগত রাতে মোট ১১ জন আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের সাত জনকে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে একজন রয়েছেন আইসিইউতে। বাকি চার জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিচালক বলেন, আহতদের মধ্যে অধিকাংশদের মাথায় ইনজুরি ছিল, কারও ফ্যাকচার রয়েছে। একজনের হাত পা ভাঙা ছিল। তাদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গাজীপুরের স্থানীয় হাসপাতাল থেকে আরও দুজন রোগী আসতে পারেন, সেখান থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে এখনও আসেনি।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার থেকে সংগৃহীত আহতদের মধ্যে ভর্কিকৃতদের তালিকায় রয়েছেন, ইয়াকুব আলী (২৫), গৌরব ঘোষ (২২), শুভ শাহরিয়ার (২০), আব্দুর রহমান ইমন (১৮), আবির খান (২০), সাব্বির খান হিমেল (৩৮) ও কাজী অমর হামজা (২১)। আর আইসিইউতে রয়েছেন কাশেম (২০)
এ ছাড়া যাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন, হাসান (২৪), রোহান (২২) ও নাঈম (২২)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
আহত সৌরভের বন্ধু পিয়াস জানান, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে যায়। এরপর আওয়ামী লীগের লোকজন মাইকিং করে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমার বন্ধুসহ অনেকেই আহত হয়। তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যালে আনা হয়েছে।’
আহতদের মধ্যে শুভ শাহরিয়া গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার কামারজুরির বাসিন্দা ফজলু রহমানের ছেলে। ইয়াকুবের বাড়ি গাজীপুর গাছা থানার শরিপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মেহের আলীর ছেলে। সৌরভের বাড়ি টঙ্গি পূর্ব থানার মধুমিতা রোডে। তিনি ওই এলাকার গণেশ ঘোষের ছেলে। আর কাশেমের বাড়ি গাছা থানার আলহেরা পেট্রোল পাম্প এলাকায়। তিনি মৃত হাজী জামালের ছেলে। অপরদিকে হাসানের বাড়ি জয়দেবপুর থানার জোড়পুকুর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে।
এদিকে শুক্রবার দিবাগত রাতের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ করেছেন দুপক্ষই। স্থানীয়রা বলছেন, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের ধীরাশ্রম এলাকার গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায় ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা’র নামে ১০০-১৫০ জন। তারা ওই বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করতে থাকে এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। এ সময় গ্রামে ডাকাত হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা ডাকচিৎকার শুরু করেন। ডাকাতির খবর পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলে গ্রামবাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং সংঘবদ্ধ হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৬-১৭ জনকে আটক করে পিটুনি দেয় গ্রামবাসী। এতে আহত হয় তারা।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চলছে এমন খবর পেয়েই তারা সেখানে গিয়েছিলেন। তারা বিষয়টিকে থামাতে গিয়েছিলেন। এসময় আওয়ামী লীগের দোসর ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন:
সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুরের সময় ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত