বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘বিদেশি ঋণ, প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রকৃতিবিনাশী সব প্রকল্প বাতিল করতে হবে। যত বৈষম্যপূর্ণ প্রকল্প আছে, সেগুলো বাতিল করা উচিত এবং সেগুলোর তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।’ জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্পের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং কীভাবে সেগুলো বাতিল করা হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
রবিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে প্লানার্স টাওয়ারে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের’ আয়োজনে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচির ১০০তম দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল যেভাবে ছিল, সেটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বৈষম্য ও ক্ষতিকর। পাবলিক সেক্টরের সেবা যেমন স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং পাবলিক স্পেসের অবস্থা বিপর্যস্ত, তবে প্রাইভেট সেক্টর অত্যন্ত ভালো অবস্থায় রয়েছে। এসব বৈষম্যবাদী উন্নয়ন প্রকল্পে অবিলম্বে পরিবর্তন প্রয়োজন।’
তিনি সরকারের কাছে আরও দাবি জানান যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন জন উপদেষ্টা তাদের দায়িত্ব নিয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রকল্প বাতিল এবং তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিক।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান বলেন, ২০১১ সালে একনেকে অনুমোদিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এক যুগ পার হলেও এটি শেষ হয়নি, বরং ঢাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ‘সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে আলাদা বাজেট রাখা হয়েছে, যেখানে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে। যদিও প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে, তবুও ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ জনগণের করের টাকায় ব্যয় হচ্ছে, যা রেলওয়ের ১২৮ একর জমির বাজারমূল্যসহ ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ ও জলাশয় ধ্বংস করছে। এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়কের পূর্ণাঙ্গ কারিগরি নকশা, অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।’
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচির ১০০তম দিনে সরকারের পক্ষ থেকে বসার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে অবস্থান কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবিদরা পান্থকুঞ্জ রক্ষায় ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা, অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন, পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজনীয় বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে পরিবেশবান্ধব ও জনস্বার্থে প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন— নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও জনভোগান্তির বিষয়ে মন্তব্য করেন। তারা দাবি করেন, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জনভোগান্তি তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক।