সনি ও প্যানাসনিকের মতো সুপরিচিত কোম্পানিতে প্লাস্টিকের কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার কাওয়াগুচি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাছ থেকে বকেয়া বেতন আদায়ে ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান করে অভিযোগ দিয়েছে ৩৯ জন বাংলাদেশি কর্মী। এর আগেও একবার বকেয়া বেতনের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন তারা। মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৭ মে) আবারও তারা পাসপোর্ট নম্বরসহ চিঠি জমা দিয়েছেন। এসব কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানিটির কাছে তাদের সাত মাসের বেতন বকেয়া আছে।
ঢাকায় অবস্থানরত কর্মীরা জানান, আমরা মালয়েশিয়ায় কাওয়াগুচি কোম্পানির কাছে সাত মাসের বেতন বকেয়া পাওনা আছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার আদালতে গত বছর মামলা দায়ের করা হয়। মালয়েশিয়ার আদালত ওই কোম্পানিকে বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেয়।
ভুক্তভোগী কর্মী হারুন অর রশিদ জানান, কোর্ট আমাদের নগদ ১০০০ রিঙ্গিত পরিশোধ করতে বলেন এবং প্রতি মাসে বাকি টাকা ১০০০ রিঙ্গিত করে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়। কোম্পানি আমাদের ১০০০ রিঙ্গিত করে দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয়। কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৫ এপ্রিল আমাদের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও কোম্পানি কোনও টাকা দেয়নি। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দিনের পর দিন সময় নিয়েও আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না।
হারুন জানান, আমরা দেশে এসে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের লিখিত অভিযোগ এবং আমাদের পাসপোর্ট নম্বর দিতে বলে। আমরা আজকে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আমাদের পাওনা টাকা যেন পাই, সেজন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালয়েশিয়ার এই কোম্পানির কাছে বেতন পাওনা আছেন ২৫১ জনের। তাদের সাত মাসের বেতন দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া আছে। দেশে ফিরে আসা ৩৯ জন কর্মী মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের এই বেতনের অর্থ উদ্ধার করে দিতে শরণাপন্ন হয়েছেন।
অপরদিকে মালয়েশিয়ার আদালতে মামলা করা ২৫১ জন কর্মী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ৩ মিলিয়ন রিঙ্গিত বেতন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু শ্রমিক সাত মাস বেতন ছাড়াই কাজ করছেন।
গত ৩০ এপ্রিল বুধবার পোর্ট ক্লাং-এর শ্রম বিভাগে অভিযোগ দায়েরকারী ২২ জন শ্রমিকের একজন জানান, তাদের মধ্যে ১২ জন এখনও বেকার।
তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা চাকরি পাচ্ছেন না। শ্রমিকরা বলছেন, তাদের কোনও দোষ নেই। এমনকি তারা বাড়িও ফিরতে পারছেন না। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে চলতে হচ্ছে তাদের।
এশিয়ায় শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা গত জানুয়ারিতে মাত্র প্রথম কিস্তির মাত্র ১ হাজার রিঙ্গিত করে পেয়েছেন। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এপ্রিলে দ্বিতীয় কিস্তির বকেয়া বেতন এখনও পরিশোধ করা হয়নি।
হল বলেন, এই পর্যায়ে আমার খুব একটা সত্যিকারের আশা বা প্রত্যাশা নেই যে, বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা শ্রমিকদের ন্যায়বিচার এবং অতীতের দাস শ্রমের প্রাপ্য মজুরি পেতে সহায়তা করবেন। শ্রমিকরা তাদের এই ধরনের নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উভয় দেশের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করা ছাড়া আর কী করতে পারেন?
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ আগস্ট শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে কোম্পানির বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এর জবাবে প্রতিষ্ঠানটি পাল্টা হুমকি দেয় এবং কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা এবং তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর জের ধরে চার কর্মীকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের মালয়েশিয়ায় পুনরায় প্রবেশে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভুক্তভোগী কর্মীদের মধ্যে কিছু কর্মীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২৫১ জনের মধ্যে ১৮১ জন কর্মীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। গত জানুয়ারি মাসে ২৩ জন কর্মীকে প্লেনের টিকিট দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয় কাওয়াগুচি।