আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি জানিয়েছে নারী মৈত্রী।
মঙ্গলবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নারী মৈত্রী কর্তৃক ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
মূলপ্রবন্ধে প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের হেড অফ প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার বলেন, সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম খুবই কাছাকাছি। একারণে ভোক্তারা যেকোনও একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বাজেটে তামাক পণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি–সংক্রান্ত প্রস্তাবণাগুলোও তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
প্রস্তাবগুলো হলো— নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা এবং সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার কথাও বলা হয়।
এছাড়া ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার দাবিও জানানো হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা উচিত। এছাড়া সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার দাবিও জানানো হয়।
নারী মৈত্রীর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী নাসরিন আকতার জানান, সুপারিশ অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে। প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩শতাংশ বেশি।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক মির মাসরুর জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ভ. শাফিউন নাহিন শিমুল। এছাড়াও তামাকবিরোধী তরুণ ফোরাম, তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরামের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।