বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর কাকরাইলে মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন টিএনজেড গ্রুপের শত শত পোশাক শ্রমিক। প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।
বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পরই নামে মাঝারি থেকে ভারী জুম বৃষ্টি। তবে প্রবল বৃষ্টিও আন্দোলন থামাতে পারেনি শ্রমিকদের। বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা কিংবা আশ্রয় ছাড়াই তারা স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় ২০ মিনিট পর বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কমে আসলে তাদের প্রতিবাদের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
বৃষ্টির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাময়িকভাবে কিছুটা পেছনে সরে গেলেও পরে আবারও তারা আগের অবস্থানে ফিরে আসেন। বিকাল পৌনে চারটার দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে জাতীয় শ্রম ভবনের সামনে থেকে মিছিল বের করেন শ্রমিকরা। কাকরাইল মোড় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের দিকে এগোলে তিনটার দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে তারা পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যান। পরে সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দেন- “বেতন চাই, বোনাস চাই, চূড়ান্ত হিসাব আজই চাই”, “১৪ মাসের ঘাম কোথায়? টিএনজেড জবাব চাই!”, “মেহনতি মানুষের ঘাম বৃথা যেতে পারে না”, “যেখানে বেতন নেই, সেখানে শান্তি নেই!”, “আমরা চাই না দয়া, চাই ন্যায্য পাওনা”সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
সকাল থেকেই শ্রম ভবনে অবস্থান
আন্দোলনকারীরা সকাল ৯টা থেকেই জাতীয় শ্রম ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন এবং সেখানে দিনের শুরু থেকেই বিক্ষোভ চালিয়ে আসছেন।
স্মারকলিপি দিলেও নেই প্রতিক্রিয়া
স্টাইল ক্রাফটের শ্রমিক নেতা রাজু আহমেদ বলেন, সোমবার (১৯ মে) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না পাওয়ায় আজ শ্রম ভবনে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
তিনি জানান, টিএনজেড গ্রুপের ১ হাজার ৫৮ জন শ্রমিকের ১৪ মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান।
ঈদের আগেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
টিএনজেড-এর আরেক শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম জানান, ঈদের আগে আমাদের ১৭ কোটি টাকা পাওনার জায়গায় শ্রম সচিব তিন কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষপর্যন্ত দেওয়া হয় মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা।
তিনি বলেন, আজকের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান চালিয়ে যাবো।
পুলিশের অবস্থান ও সতর্কবার্তা
শ্রমিকদের অবস্থান ও মিছিল প্রসঙ্গে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনকে ঘিরে কাকরাইল ও আশপাশে যেকোনও ধরনের আন্দোলন ও মিছিল নিষিদ্ধ। তবে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে, তাই আপাতত কোনও সমস্যা নেই।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কিংবা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।