X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আনার হত্যাকাণ্ডের এক বছর: ডিএনএ রিপোর্টে আটকে আছে তদন্ত

নাঈমুল হক
২২ মে ২০২৫, ১০:০১আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ১০:০১

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে দুটি মামলা হয়। ভারতের মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে জমা দিলেও বাংলাদেশের মামলার তদন্ত ১ বছরেও শেষ হয়নি। ১ বছরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের জমার তারিখ পিছিয়েছে ১০ বার। অবশেষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) থেকে এ মাসের ১৫ মে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে মামলার সদ্যবিদায়ী তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, আনারের ডিএনএ রিপোর্ট পেলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নেওয়ার জন্য তাদের আসামি করেছে। এখনও সেই মামলা বহাল আছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ মে গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রবেশ করেছিলেন আনোয়ারুল ইসলাম। ১৩ তারিখ নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ তারিখ কলকাতার অদূরে বরাহনগর থানায় তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস নিখোঁজ ডায়েরি করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপর ২২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্স নামের একটি বহুতল ভবনে আনারের খুন হওয়ার কথা জানায় ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। খুন হওয়ার দাবি করা হলেও আনারের দেহ পায়নি তদন্তকারীরা। যদিও ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে সন্দেহজনক মাংসখণ্ড উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এ ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়।

এ পর্যন্ত মামলায় ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্য ছয়জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। গত ২১ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এদিন তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় আদালত আগামী ২৭ মে দিন ধার্য করেন।

আসামিরা হলেন, সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া, সিলিস্তি রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তাদের মধ্যে মিন্টু ছাড়া ছয়জনই দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে ৭ আসামি কারাগারে আছেন।

গত বছরের ১৯ আগস্ট ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী রাজ্যটির উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত আদালতে ৮৭ দিনের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১ হাজার ২শ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে সিআইডি সাবেক এমপি আনার হত্যার ঘটনায় অন্যতম দুই আসামি কসাই জিহাদ হাওলাদার ও মোহাম্মদ সিয়ামকে অভিযুক্ত করেছে। একই সঙ্গে হত্যা করার আগে এবং পরে কীভাবে আনারের মরদেহ লোপট করা হয় এরও বিবরণ তুলে ধরেছেন সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়।  ১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’

এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।

এজাহারে এমপির মেয়ে আরও উল্লেখ করেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ-খবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনও সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বারাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়রি করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। ফলে বাবাকে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।

মামলার সদ্য তদন্ত কর্মকর্তা বাহালুল বাহার খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমপি আনারের ডিএনএ রিপোর্টটা আমরা পাইনি। ডিএন রিপোর্ট পেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে। মূলত ডিএনএ রিপোর্ট আনতে না পারায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যায়নি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির কাছে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্টের বিষয়টি ইন্টারপোলের বিষয়। এ বিষয়ে আমার আর তেমন কিছু জানা নেই।

সিআইডির মিডিয়া বিভাগের জসিম উদ্দিন বলেন, গত ১৫ মে মামলাটি সিআইডিকে ন্যস্ত করা হয়। নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।

আসামি শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ভূঁইয়ার আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে কলকাতায়। গুম ও হত্যার ঘটনা সেখানকার। অথচ মামলা হয়েছে বাংলাদেশে। মামলায় ভারতের কেউ জড়িত না। এটা তো বিশ্বাসযোগ্য না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিকভাবে এ হত্যা থেকে ফায়দা নেওয়ার জন্য তাদের ফাঁসিয়েছে। এখনও এ মামলা বহাল আছে। ফ্যাসিস্ট আমলের মামলা, এখনও জামিন হচ্ছে না।

/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জরুরি আইন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার বিষয়ে একমত দলগুলো: আলী রীয়াজ
জরুরি আইন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার বিষয়ে একমত দলগুলো: আলী রীয়াজ
রুশ হামলায় ইউক্রেনে নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক
রুশ হামলায় ইউক্রেনে নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক
‘উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত ও জরুরি আইন সংস্কারে বিএনপির আপত্তি নেই’
‘উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত ও জরুরি আইন সংস্কারে বিএনপির আপত্তি নেই’
সিলেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট
সিলেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট
সর্বাধিক পঠিত
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ