কক্সবাজার বিমানবন্দরে শিগগিরই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরটি রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলাই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো বিমান চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক। তবে, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু এবং চট্টগ্রামে কার্গো সার্ভিস চালু করতে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। যদিও বেবিচক বলছে, জুলাই মাসেই কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং চট্টগ্রামে কার্গো ফ্লাইট চালু হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দর দিয়ে গড়ে ২৫-৩০টি যাত্রীবাহী ও ৬-১০টি কার্গো বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে। বিমানবন্দরটি রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা এসেছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের আশপাশে বসতভিটা থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবন্দরের অনুকূলে বন্দোবস্তকৃত ভূমি থেকে পুরনো ঝিনুক মার্কেটের ১৪টি দোকান ও বস্তিসহ ৪২ পরিবারকে অপসারণ করা যাচ্ছে না। বিমানবন্দরের অনুকূলে ঝিনুক মার্কেট এলাকায় অবশিষ্ট ০.০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না। বিমানবন্দরের ৪.৫৬ একর জমিতে স্থিত গণপূর্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থাপনা অপসারণ না হওয়ায় জমিটি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া, বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকার ভেতরে সেনাবাহিনীর দাবিকৃত ৬.৫৭ একর জমির মধ্যে ৪.৬৪ একর ভূমিতে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বাধা আসায় ফায়ার স্টেশন ভবন, ড্রেনেজ, পেরিফেরিয়াল রোড ও সিকিউরিটি বাউন্ডারি দেয়াল ইত্যাদি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবন্দরের অনুকূলে ৬৮২ একর জমির মধ্যে ৯৭ একর জমিতে ৩ হাজার ৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা কঠিন হতে পারে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এখানে আমদানি কার্গো এরিয়ায় থাকা ৩টি ওয়েইং মেশিনের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৫ টন। কিন্তু কার্গো অপারেশন শুরু হওয়ার পর রফতানি এরিয়ায় কোনও ওয়েইং মেশিন স্থাপন করা হয়নি। এটা নিয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অডিট টিম আপত্তি জানিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এখানে ওয়েইং মেশিন স্থাপন প্রয়োজন। এ ছাড়া পচনশীল কোনও পণ্যের রফতানি করার ক্ষেত্রে কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ ছাড়া কোনও উপায় নেই। এখানে রফতানি এরিয়ায় থাকা ২টি কোল্ডস্টোরেজ বিকল হয়ে আছে। রফতানি এরিয়ায় থাকা দুটি স্ক্যানিং মেশিনের প্রবেশপথ একটি হওয়ায় ব্যবহারে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে এখানে আলাদা প্রবেশপথ প্রয়োজন।
বিমানবন্দরে পুরো অপারেশন পরিচালনার জন্য একটিমাত্র কাস্টমস সেটআপ রয়েছে। ফলে, পণ্য খালাস বিলম্বিত হচ্ছে। এ জন্য কার্গো ভিলেজে স্বতন্ত্র ও নিবেদিত কাস্টমস সেটআপ নিশ্চিতকরণ অতি জরুরি।
বিমানবন্দরের কার্গো ভবনের নিচতলার সোনালী ব্যাংকের শাখাটি নিরাপত্তা ও অপারেশনাল কার্যক্রমের স্বাভাবিক গতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ব্যাংকটি অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে হবে। আরএ-৩ জোন স্থাপন করা প্রয়োজন। ২০০৪ সালে নির্মিত ভবনে অদ্যাবধি অপারেশন চলে আসছে— যা পরবর্তী পর্যায়ে সম্ভব হবে না। বিমানবন্দরের মাস্টারপ্ল্যানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা না হলে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। এ ছাড়া এখানে অস্থায়ীভাবে ১১ জন কাজ করছে। অর্গানোগ্রামে নতুন পদ সৃষ্টি করে স্থায়ী জনবল নিয়োগ না দিলে কার্গো সার্ভিস বাড়ানো করা কঠিন হবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্ধারিত সময়ে চালু করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর চালু করার কাজকর্ম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জমিজমার কিছু ইস্যু আছে, আমরা যে টার্গেট লাইন ধরে এগোচ্ছি— তার মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো। কিছু জায়গায় তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ঝিনুক মার্কেট নিয়ে কাজ চলছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এটা হয়ে গেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। টার্মিনাল ভবনের কাজ দ্রুত চলছে। বৃষ্টির জন্য হয়তো শেষ হবে না, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। বর্তমানে যে বিল্ডিং আছে সেটার মাধ্যমে শুরু করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বর্তমান বিল্ডিংটা ব্যবহার করে কীভাবে অপারেশন শুরু করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। রানওয়ে এবং এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের কাজ সময়মতো শেষ হবে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা আছে জুনের শেষে অথবা জুলাইয়ে এটা চালু করবো।
ট্রি প্লান্টেশন এবং এয়ারফোর্সের ভবন বিমান ওঠানামায় সমস্যা করবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিল্ডিংটা যখন করা হয়েছে, রানওয়ের হিসাব করে করা হয়েছে। এটাতে কোনও সমস্যা হবে না। আমাদের অন্য সমস্যা রয়েছে। অ্যাপ্রোচ পাশে একটা মাদ্রাসা রয়েছে, একটা এতিমখানা রয়েছে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরুর বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূইয়া বলেন, ‘আমরা এখন কার্গো অপারেশনের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ঢাকায় বেশি কার্গো পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেট থেকে কার্গো অপারেশন শুরু করেছি। অতি সত্বর চিটাগাং থেকে কার্গো অপারেশন করা হবে। যাতে আমরা ইস্ট ওয়েস্ট কানেক্টিভিটিটা করতে পারি। তখন দেখা যাবে চিটাগাং একটা এভিয়েশন হাব হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে আগের ইনফ্রাসট্রাকচার রয়েছে, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কার্গো চলতো। কার্গো অপারেটরদের কাছ থেকে আমরা পজিটিভ সাড়া পাচ্ছি। বিমানের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে, খুবই একটা ভালো নিউজ। সেগুলো আমরা কনসিডার করছি। আমাদের দেশে সবজি উৎপাদন হয়। বিদেশে যারা থাকেন তাদের কাছে এসব পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছি।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামে আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কার্গো চালু করার চেষ্টা করছি। ইউরোপ বা অন্য কোথাও কার্গো গেলে আরএথ্রি-এর একটা বিষয় রয়েছে এবং ইডিএস মেশিন লাগে। এটা স্থাপন করতে একটু সময় লাগছে। ঢাকায় একটা ইডিএস মেশিন আছে, সেটি সেখানে নিয়ে সেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’