জাতীয় সীমার বাইরেও মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য (বিবিএনজে) চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলন (ইউএনওসি৩) এর ফরাসি রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত ও মহাসাগরের জন্য নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত অলিভিয়ে পোয়ভ্রে দ’ আর্ভর। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব মহাসাগরের সামনে ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাংবাদিকরা অনলাইনে এই সম্মেলনে যোগ দেন। সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাডভাইজার (ইউএনওসি৩) গাব্রিয়েলে রোয়েসিউ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৯-১৩ জুন ফ্রান্সের নিস শহরে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন। সমুদ্র সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ ও সব অংশীদারদের সম্পৃক্ততা ত্বরান্বিত করাকে প্রতিপাদ্য হিসেবে নিয়ে এবারের সম্মেলনের আয়োজনে সহকারী আয়োজক হিসেবে রয়েছে কোস্টারিকা।
অলিভিয়ে পোয়ভ্রে দ’ আর্ভর সতর্ক করে বলেন, ‘২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা চার মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ওপর। এজন্য ব্লু ইকোনমিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই সম্মেলনটি ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর প্রথম জাতিসংঘ সম্মেলন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশগ্রহণকারীরা মূল খেলোয়াড়, তারাই ব্লু ইকোনমির প্রথম উপকারভোগী। শিপিং, মেরিটাইম সাপোর্ট, ফিশারিজ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই অঞ্চল মহাসাগরের ভবিষ্যত নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তিনি জানান, এটি প্রথমবারের মতো ব্লু ইকোনমি নিয়ে আয়োজিত সম্মেলন। যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ১৬টি রাষ্ট্রের প্রধান অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় ক্ষতিগ্রস্ত শহর ও অঞ্চল নিয়েও আলোচনা হবে। আমাদের অবশ্যই বিবিএনজে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ব্লু-ইকোনোমি এবং সামুদ্রিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশেরও অনেক কিছু করার রয়েছে।’
জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন (বিবিএনজে)- হলো এমন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র এলাকায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করা। চুক্তির আওতায় সমুদ্রের আন্তর্জাতিক সীমানার জীবসম্পদের ওপর কোনও রাষ্ট্র সার্বভৌম অধিকার দাবি করতে পারবে না এবং এসব সম্পদের ন্যায্য বণ্টন ও ব্যবহারে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং ঐতিহ্যগত জ্ঞান প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য স্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন এবং অঞ্চলভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমুদ্র পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে কাজ করবে এই চুক্তি।
ফরাসি একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সাগর সংরক্ষণে বৈশ্বিক মনোযোগ কম। ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মধ্যে সাগর সংক্রান্ত লক্ষ্যটিই (এসডিজি ১৪) সবচেয়ে কম অর্থায়ন পেয়েছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশই শোষণ করছে মহাসাগর, যার ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠী চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সমুদ্র রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ দরকার। কপ সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি সামগ্রিক গতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু ১৭টি এসডিজির মধ্যে সমুদ্রই সবচেয়ে কম অর্থায়নপ্রাপ্ত, এতে কেউ তেমন মনোযোগ দিচ্ছে না। এটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত উষ্ণতা মহাসাগরে শোষিত হচ্ছে। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সামুদ্রিক জীবন এবং যারা সমুদ্র নির্ভর করে তাদের জীবিকায়।’