দুই দফা দাবিতে ১৩তম দিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন ‘তথ্য আপা প্রকল্পের’ কর্মীরা।
এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। অবিলম্বে দাবি না মানা হলেও আবারও সারা দেশের কর্মীদের রাজধানীতে এনে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত এ প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্যায়ের) কর্মরতদের সমগ্রেডে পদসৃজন পূর্বক রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও কর্তনকৃত বেতন ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের দাবিতে গত ২৮ মে থকে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ছিলেন তারা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে ঈদের পর দিন রবিবার (৮) জুন সকাল ৯টা থেকে তারা আবারও অবস্থানে ছিলেন।
সোমবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই সেখানে অবস্থান নেন তারা। দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— শতাধিক কর্মী নিজেদের দাবি সংবলিত ব্যানার সাঁটিয়ে বসে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। আজ তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন পথচারী দুই কলেজ শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই দুই শিক্ষক বলেন, আন্দোলনকারীরা তাদের সমগোত্রীয় না হলেও মানবিক কারণে তাদের সঙ্গে বসেছেন। কারণ আমাদের কাছে মনে হয়েছে, তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক।
এর আগে দাবি আদায়ে গত (১ জুন) কয়েক দফা বাধা অতিক্রম করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় আন্দোলনের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তবে সরকারের পক্ষ এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও কথা বলা হয়নি। বরং সেদিন শেষ বিকালে পুলিশ তাদেরকে জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তিও হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পরেন।
অবশ্য তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেলও পরক্ষণেই আবার ছেড়ে দেয় পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের একজন সুমাইয়া আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় কর্মরত। ঈদের আগে থেকেই আন্দোলনে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে করুণা চাইনি। আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে এসেছি। অথচ প্রিয়জনদের ছেড়ে ঈদের দিন এখানে থাকলেও সরকারের কোনও পদস্থ কেউ আমাদের দেখতেও আসেনি। যা খুবই দুঃখজনক।
আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, তাদের চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২৪০০ ও সহকারীদের বেতন থেকে ১৩৯০ টাকা কেটে নেয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
কিন্তু দাবি পূরণের কোনও অগ্রগতি না দেখে গত ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। মাঝে তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তথ্য আপা কর্মীদের ভাষ্যমতে, অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ প্রকল্পে যোগ দেন তারা।
৪৯২টি উপজেলায় তথ্যকেন্দ্রে একজন করে তথ্যসেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড), দুজন তথ্যসেবা সহকারী (১৬ তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহায়ক (২০ তম গ্রেড) মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন।
তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি এই ৮টি বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন দেড় হাজার কর্মী।