সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে তার উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে হেনস্থার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ, এই ঘটনার তদন্ত এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ যথাযথ বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
সোমবার (২৩ জুন) সংস্থাটির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গতকাল রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ উত্তরার পাঁচ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে নুরুল হুদাকে আটক করে এবং পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ডিবি হেফাজতে নিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়- একদল পুরুষ, যাদের সকলেই দৃশ্যমান ও শনাক্তযোগ্য, নুরুল হুদাকে প্রকাশ্যে প্রহার করছে এবং তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে অপমানজনক আচরণ করছে।
এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ এবং ৩৫(৫) অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিক আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী; আইনানুগ প্রক্রিয়া ব্যতীত বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে এমন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না এবং কোনও ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি প্রদান বা আচরণের করা যাবে না। এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একাধিক রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অন্য কোনও ব্যক্তিকে কোনও ধরনের বিচারবহির্ভূত শাস্তি দিতে পারে না। পাশাপাশি দণ্ডবিধি এর ধারা-৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় কোনও ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদানকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। জনসমক্ষে সংঘটিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবলমাত্র সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি চরম অবজ্ঞা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নুরুল হুদার বিরুদ্ধে গত ৮ মে নারায়ণগঞ্জ জেলার জজ কোর্টে ২০১৮ সালের নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে সে মামলায় তিনি তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সিইসি হিসেবে একজন অভিযুক্ত মাত্র, এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে সংবিধান, বিচারবিভাগ ও আইনের পরিমণ্ডলে বিচার নিশ্চিত করা বিচারিক সিদ্ধান্তের অধীন। এ কারণে তাকে কোনভাবেই বিচার- বহির্ভূত এবং অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণের শিকার করা যেতে পারে না।
সংঘবদ্ধ এ সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা নিন্দা জানালেও, এখন পর্যন্ত যারা সংঘবদ্ধভাবে এ সহিংসতায় অংশ নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় ঘটনার দ্রুত এবং সুস্থ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি ও যথাযথ বিচার নিশ্চিত করাসহ এ ধরণের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ব্লাস্ট।