X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

‘গ্রাহক সেবায় নতুন সার্ভিস নিয়ে আসবে বিক্রয়’

হিটলার এ. হালিম
১৯ মে ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫০

বাড়ি-গাড়ি থেকে ঘরের টুকিটাকি; পুরনো সবধরনের জিনিস কেনাবেচার হাট হিসেবে দেশে বেশ জনপ্রিয় প্লাটফর্ম বিক্রয় ডটকম। এই মার্কেটপ্লেসের ‘হেড অব মার্কেটিং’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ঈশিতা শারমিন। পরে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি পেয়ে তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রথম দেশীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে। চলতি বছর হয়েছেন প্রথম দেশীয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এর আগে মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলসহ দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়েছেন ঈশিতা শারমিন। কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার ও প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও ভবিষ্যত বিভিন্ন দিক নিয়ে। জানালেন, শিগগিরই সার্ভিস পয়েন্ট বা পণ্য বিনিময় কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের; যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা উপস্থিত হয়ে নিশ্চিন্তে পণ্য বিনিময় করতে পারবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: বিক্রয় ডটকমের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এখন আপনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। কেমন লাগছে?

ঈশিতা শারমিন: অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। সিইও মানেই অনেক বড় দায়িত্ব। বিগ পজিশন কামস উইদ বিগ রেসপনসিবিলিটি। আমার কাছে দায়িত্বটা খুব ইন্টারেস্টিং। অনেক কিছু কন্ট্রোল করতে পারছি, সবার মতামত নিতে পারছি। এখন আমাকে সবার কথা চিন্তা করতে হয়। আগে বড় পরিসরে ভাবতে পারতাম না বা ভাবতে হতো না; এখন সেটাই করতে হয়। কোম্পানির ভালো কিছু করা মানে দেশের জন্য কাজ করা। সিইও’র দায়িত্ব হল বড় মিশন নিয়ে কাজ, ২৪ ঘণ্টা কাজ। আগে অফিসের নির্ধারিত সময় ছিল। এখন আর সেটা নেই। সবসময়ের কাজ হলেও আমি সিইও দায়িত্বটা উপভোগ করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: জার্নিটা কেমন ছিল?

ঈশিতা শারমিন: খুব ভালো ছিল। আমি জার্নিটা এনজয় করেছি। অবশ্য এই পথে অনেক বাধা এসেছে, মহামারিতে পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়, এসব ঝড়-ঝাপটা কাটিয়ে ওঠা অনেক বড় সফলতা। এসব বাধার কারণেই আমি অনেক কিছু খুব অল্প সময়ে শিখেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিক্রয় ডটকমের শুরু এবং বর্তমান অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য কী?

ঈশিতা শারমিন: শুরু এবং বর্তমানের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শুরুর তুলনায় এখন তো মনে হয় এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা কোম্পানি। শুরুতে রেভিনিউয়ের বিষয় ছিল না। মানুষের কাছে পৌঁছানোই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এখন প্রতিষ্ঠান অনেক ম্যাচিউরড। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমিও বড় হয়েছি। শুরু এবং বর্তমানের পার্থক্যটা সংক্ষেপে বলতে গেলে- প্রথম দিকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে যখন মানুষের কাছে যেতাম, তখন কেউ কথাই বলতে চাইতো না। আর এখন বিক্রয় ডটকম একটি প্রয়োজনীয় ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত এবং আমাদের সার্ভিস ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও অনেক বেশি।

বাংলা ট্রিবিউন: শুরুতে এটা ছিল সেবাদানকারী একটি মার্কেটপ্লেস। এখন প্রিমিয়াম সার্ভিস দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সফল একটি প্রতিষ্ঠান। অনেক ধরনের সেবা যুক্তি হয়েছে বিক্রয় ডটকমে। বিষয়টি কি ব্যাখ্যা করবেন?

ঈশিতা শারমিন: আমাদের খুব ভালো মার্কেটিং প্ল্যান ছিল। দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অনেক। এরমধ্যে অনেকেরই আবার দুটি করে ফোন আছে। তারা ফোন পরিবর্তন করতে চায়। আবার নতুনরাও অল্প দামে স্মার্টফোন কিনতে চায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোনের ডিমান্ড ছিল এবং আছে। একইভাবে ল্যাপটপ, গাড়ি, মোটরবাইক ইত্যাদির ক্ষেত্রেও পুরনোগুলোর ডিমান্ড রয়েছে। বিক্রয় ডটকমে এসব পণ্য কম দামে পাওয়া যায়। পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এসএমই ব্যবসায়ীদের ঠিকানা করে দিচ্ছি আমরা। ২০১৬ সাল থেকে এটা চালু আছে। মূলত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবা দেওয়ার কারণেই আমরা সফলতা পেয়েছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এ ধরনের অনেক মার্কেটপ্লেস টিকে থাকতে পারেনি। বিক্রয় ডট কম পেরেছে। কীভাবে?

ঈশিতা শারমিন: যেকোনও বাজারেই টিকে থাকতে হয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আমাদেরও অনেক কম্পিটিটর ছিল। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেতে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের অনেক সুবিধা রয়েছে। বিক্রয় ডটকমের আছে নিজস্ব ভেরিফিকেশন টিম। এছাড়া যেকোনও বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগের সুযোগও আছে। ফলে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছি আমরা এবং বাজারে ভালোভাবে টিকে আছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিক্রয় ডটকমের বাজার সাইজ কত?

ঈশিতা শারমিন: আমাদের মাসিক নিয়মিত গ্রাহকের সংখ্যা ৩৫ লাখ। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তো আরও অনেক বেশি। সে হিসাবে আমাদের আরও উন্নতির সুযোগ আছে। এখন পর্যন্ত বাজারের ২০ শতাংশ দখল করতে পেরেছি আমরা।

‘গ্রাহক সেবায় নতুন সার্ভিস নিয়ে আসবে বিক্রয়’

বাংলা ট্রিবিউন: বিক্রয় ডট কমে চোরাই পণ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। যেমন স্মার্টফোনসহ আরও অনেক পণ্য। এটার সমাধান কী? সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ তো নিতেই চাইবে।

ঈশিতা শারমিন: এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখন এই সমস্যার অনেকখানি সমাধান হয়ে গেছে। আমরা ভেরিফায়েড সেলারদের ব্যাজ দিচ্ছি। তাদের (ব্যাজধারী) কাছ থেকে নির্দ্বিধায় পণ্য কেনা যাবে। ভেরিফায়েড সেলারদের সব তথ্য যাচাই করা হয়। এজন্য আমাদের কয়েকটি টিম রয়েছে। প্রতিদিন আমাদের প্ল্যাটফর্মে ১০ হাজারের মতো বিজ্ঞাপন আসে। এর বড় একটা অংশ কিন্তু বাতিল হয়ে যায় আমাদের নীতি অনুসরণ না করার কারণে। বিক্রয় ডটকমের প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেট সেলারদের বিজ্ঞাপন যাচাইয়ের জন্য রয়েছে ম্যানুয়াল টিম। এরা সিস্টেম রিভিউ করে থাকে। এছাড়া আমাদের রয়েছে ভেরিফিকেশন টিম এবং ফ্রড ইনভেস্টিগেশন টিম। এই দুটি টিমকে নজরদারির জন্য আবার আরেকটি টিম আছে। সব মিলিয়ে আমাদের ৪ স্তরের চেকপয়েন্ট আছে। তারপরও এমন হতে পারে। তবে সেটা খুবই কম, উল্লেখ করার মতো নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রেতা যে পণ্যের ছবি সাইটে দেখছে কিন্তু বিক্রেতার কাছ থেকে কেনার সময় সেই পণ্য অনেক সময় পান না। এসব সমস্যা সমাধানে আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন।

ঈশিতা শারমিন: পণ্যের যথাযথ ছবিটা যেন দেওয়া হয়, সেই ব্যাপারে বিজ্ঞাপনদাতাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। পাশাপাশি আমরা ক্রেতাদের সেফটি টিপস দিয়ে থাকি। ক্রেতারা পাবলিক কোনও জায়গায় সরাসরি দেখা করে পণ্যটা যেন যাচাই করে নেয়। বিক্রেতা আমাদের সদস্য বা ভেরিফাইয়েড হলে যেকোনও সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি। প্রাইভেট ইউজারের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। এজন্য ক্রেতাদের সতর্ক হতে হবে, আমাদের সেফটি টিপসগুলো অনুসরণ করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: বিক্রয় ডটকমের সার্ভিস পয়েন্ট বা পণ্য বিনিময় কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা উপস্থিত হয়ে পণ্য বিনিময় করতে পারবেন। বিশেষ করে প্রতারণামূলক ঘটনা প্রতিহত করতে। এ সম্পর্কে কিছু বলবেন?

ঈশিতা শারমিন: আমাদের গ্রাহকরা সবসময়ই গঠনমূলক সাজেশন দিয়ে থাকেন এবং আমাদের চালু করা ভিন্ন ভিন্ন সার্ভিস বেশ সাদরে গ্রহণ করে থাকেন। সার্ভিস পয়েন্ট, সার্টিফিকেশন সিস্টেম - এরকম বেশ কয়েকটি নতুন সার্ভিস আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের এক্সপেরিয়েন্সকে আরও সহজ করতে এবং তাদের চাহিদার ভিত্তিতে আমরা আরও কিছু নতুন ফিচার আমাদের সার্ভিসে যোগ করবো বলে আশা করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামীতে বিক্রয়ের পরিকল্পনা কী?

ঈশিতা শারমিন: আগামীতে পরিকল্পনা হলো সার্ভিস লেভেল বাড়ানো। আমরা পণ্য যাচাই-বাছাই করে দেব। তবে বর্তমানে যেভাবে চলছে এটাও চালু থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন কী সেবা আসছে?

ঈশিতা শারমিন: গাড়ির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বা রেটিং দেওয়ার সুবিধা চালু করতে যাচ্ছি আমরা। কোনও পুরনো গাড়ির মান কেমন সেটা আমাদের টিম যাচাই করবে এবং সেই অনুযায়ী সার্টিফিকেট বা রেটিং দেবে। এতে ক্রেতারা গাড়িটি সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য রিভিউ পাবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ঈশিতা শারমিন: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
বাংলা ট্রিবিউনকে আমির খসরু মাহমুদ‘দুই নেতা ছিলেন উষ্ণ, বৈঠক ভবিষ্যৎ রাজনীতি গড়ে তোলার মাইলফলক’
একান্ত সাক্ষাৎকারে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু৭২-এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের, দেশের মানুষ ইতিহাসের বিকৃতি মানবে না
সাক্ষাৎকারএকাত্তর ইতিহাস নয়, রাজনৈতিক চর্চায় পরিণত হয়েছে: আফসান চৌধুরী
সর্বশেষ খবর
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি