X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে অধ্যাপক এ কে আজাদ খান

ফাস্টফুড ও কায়িক শ্রমে অনীহা ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ

সাদ্দিফ অভি
১৪ নভেম্বর ২০২২, ১২:০৪আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:১২

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মানুষের জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আর একবার ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসা আজীবন। ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

১৯৯১ সাল থেকে ১৪ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ১৯৯১ সালে বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই দিনটিকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। এই বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘এডুকেশন টু প্রোটেক্ট টুমরো’। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যমতে, বর্তমান বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিস আক্রান্ত। মোট ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এরমধ্যে ৯ কোটি মানুষ দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৮০০ জন। এরমধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব আছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশের। অর্থাৎ ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংস্থাটি আরও বলছে, এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ কোটিতে পৌঁছাবে। এমনকি ২০৪৫ সাল নাগাদ ৭০ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকের সঙ্গে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৩ দশমিক ২ কোটি মানুষই (প্রতি ২ জনে ১ জন) জানেন না তারা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশে এই মুহূর্তে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৩০ বছরের বেশি বয়সের সবাইকে পরীক্ষা করলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস রোগী বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। কিন্তু কতো হারে বাড়ছে সেটা বলা মুশকিল। তবে অনেক বেশি বাড়ছে। মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে। এই যে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে মুটিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগী বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ।

শঙ্কার জায়গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এভাবেই চলতে থাকলে ডায়াবেটিস রোগী বহুগুণে বেড়ে যাবে। এই রোগ তো আজীবনের রোগ এবং ব্যয়বহুল বিষয়।  

অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর সব জায়গায় এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। কিছু কিছু রোগীর ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। কারণ, এই রোগের মূল কারণই ইনসুলিন কমে যাওয়া। ইনসুলিন মানুষের জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস। কারও কারও ইনসুলিনের মাত্রা এতই কমে যায়, যার ফলে তাকে আজীবন ইনসুলিন নিতেই হবে। আজীবন ইনসুলিন গ্রহণ করা খরচের ব্যাপার তো বটেই। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সরকার টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং দেওয়া শুরু করেছে।

জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান

অর্ধেক মানুষই জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। সেক্ষেত্রে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। একজন মানুষের লক্ষণ থাকুক কিংবা না থাকুক, একটি বয়স পার হলে নিয়মিত পরীক্ষা করবেন ডায়াবেটিস আছে কিনা। সাধারণত ৪০ বছর পর চেক করার পরামর্শ আমরা দেই। কিন্তু তার আগেই যদি কেউ বেশি মুটিয়ে যায় কিংবা পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকে তাহলে আরও আগে থেকে পরীক্ষা করা শুরু করতে হবে।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ খান ১৯৪১ সালের ২ মে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালে প্রথমে অনারারি রিসার্চ ডিরেক্টর হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন এ কে আজাদ খান। ১৯৮৭-৮৮ সাল থেকে পার্টটাইম কাজ করতেন তিনি। ১৯৯২ সালে পিজি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বারডেমে কাজ শুরু তিনি। ১৯৯২ সাল থেকে বারডেমে বিনা বেতনে চাকরি করছেন আজাদ খান। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস এবং এন্ড্রোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার (বারডেম)-এর শুরু হয়েছিল তার হাত ধরেই।

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা জার্নালে এ কে আজাদ খানের ১৬৭টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, বাংলাদেশ এন্ড্রোক্লিন সোসাইটি। এসব প্রতিষ্ঠান চালুর মধ্য দিয়ে সমাজসেবায় নিজের অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। ২০২১ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
সর্বশেষ খবর
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে