রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহিব রেজার মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলার দায়ে ডা. মামুন আল মাহতাব সপ্নীলের সনদ পাঁচ বছরের জন্য এবং আরও দুই চিকিৎসকের সনদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিএমডিসি রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেনের সই করা পৃথক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সনদ স্থগিত হওয়া অপর দুই চিকিৎসক হলেন— ডা. মো. নাসিফ শাহরিয়ার ইসলাম ও ডা. মো. সুনান বিন ইসলাম। এই দুই চিকিৎসক আগামী ছয় মাস কোনও ধরনের চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হতে পারবেন না। এ ছাড়া নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না তারা ।
একই দিন অস্ত্রোপচার দলের প্রধান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ ৫ বছরের জন্য স্থগিতের আদেশ দেয় বিএমডিসি। এর আগে গত ২১ জুন বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুই চিকিৎসকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— রাহিব রেজার চিকিৎসাকাজে আনা অভিযোগের দায় প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৩(১) এবং বিএমডিসি প্রবিধানমালা ২০২২ এর বিধান ৩৬(৪)(খ) অনুযায়ী বিএমডিসি রেজিস্টার থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে প্রদত্ত রেজিস্ট্রেশন ছয় মাসের জন্য সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
ডা. সপ্নিলের ক্ষেত্রে সনদ পাঁচ বছরের জন্য সাময়িকভাবে বাতিলের কথা বলা হয়।
উভয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএমডিসি আইনের ২২(১) ধারা অনুযায়ী, এই সময়ে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেডিক্যাল চিকিৎসক হিসেবে কোনও অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা, অথবা নিজেকে মেডিক্যাল চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না।
নিষেধাজ্ঞাটি মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ল্যাবএইড হাসপাতালেই অ্যান্ডোসকপি করার সময় রাহিব রেজা নামের এক রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। চার দিন পর তার মৃত্যু হয়।
রাহিব রেজার পরিবারের অভিযোগ, গাফিলতির কারণেই এই মৃত্যু ঘটেছে এবং এর দায় ডা. স্বপ্নীল কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তবে এই চিকিৎসক তখন চিকিৎসায় কোনও ভুল ছিল না বলে দাবি করেন।
সেসময় দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। বিষয়টি নিয়ে রাহিবের পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হয়। গত বছরের ১১ মার্চ আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। ছয় মাস তদন্ত শেষে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিটি। সেখানে চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়। এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলেছিল তদন্ত কমিটি।