X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকার

আগের চেয়ে মহামারির আশঙ্কা বেড়েছে: সারাহ গিলবার্ট

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ
১২ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:৩৭আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৩

এ বছর ঢাকা লিট ফেস্টে বিশ্বের বেশ কিছু খ্যাতিমান ব্যক্তির আগমন ঘটেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলোজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট তাদেরই একজন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার সহ-উদ্ভাবক হিসেবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে তিনি এবং তার সহকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।।

জেমকন গ্রুপের পরিচালক এবং অরগানিকেয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ ভ্যাকসিনোলোজিতে বিশেষজ্ঞদের কাজ সম্পর্কে আরও জানতে সারাহ গিলবার্টের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ: চীনে চার জন ব্যক্তির নতুন ধরনের নিউমোনিয়ার কথা জানতে পেরে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনি নতুন প্যাথজেনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেন। মহামারি ঘোষণারও আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রেখেছিল?

সারাহ গিলবার্ট: ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা বেশ কিছু বছর হলো কাজ করছি। এরমধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ অন্যতম। ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের আশঙ্কা হয়েছে, ভবিষ্যতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে মহামারি হতে পারে। তাই আমরা এমন এক ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছিলাম, যা একই সঙ্গে অনেক ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হয়। যেহেতু আমরা মার্স ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছি, তাই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কী ধরনের ভ্যাকসিনের প্রয়োজন তা বুঝতে পারা খুব বেশি কঠিন কাজ ছিল না। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি সমন্বিত এই ভ্যাকসিন থেকে কম সময়ে সহজেই নতুন ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব।
ঢাকা লিট ফেস্টের একটি সেশনে কথা বলছেন সারাহ গিলবার্ট। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
আপনি কেমন ধরনের ইমিউনিটি গড়ে তুলতে চান, তা নিয়ে তখন কিছু ভেবেছিলেন?

সারাহ গিলবার্ট: এত বছর বিভিন্ন ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে বুঝেছি যে আমরা বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন বানাতে চাই, সেজন্য প্রথমে যে প্রোটিনের বিরুদ্ধে আমরা ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে চাই সেটির সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স তৈরি করি। আক্রান্ত হওয়ার পর দেহের কোষে যে প্রোটিন তৈরি হয়, সেটিই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যাতে তৈরি হয়। আমরা খুব বেশি বদল আনিনি। হয়তো একই পন্থায় এক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আমরা শুধু একটা অতিরিক্ত সিকুয়েন্সে প্রোটিনে যুক্ত করি। যার অর্থ হলো আমাদের ইমিউন ব্যবস্থা ভাইরাসের মতো এমন কিছু দেখতে পারে, যার বিরুদ্ধে আমরা সুরক্ষা তৈরির চেষ্টা করছি।

কোভিড-১৯-এ সম্প্রতি আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের বুস্টার ডোজের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করতে কেন বলা হয়েছে?

সারাহ গিলবার্ট: ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আক্রান্ত হওয়ার অর্থ প্রায় বুস্টার ডোজ নেওয়ার মতোই। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউন রেসপন্স বৃদ্ধি পাবে। তাই আসলে তিন মাসের মধ্যে আর ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন ডোজগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সময় যত বেশি, ভ্যাকসিনের কর্মক্ষমতাও তত বেশি হয়ে থাকে।

চীনে তিন বছরের লকডাউন সত্ত্বেও এখনও দেশটিতে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়নি এবং দৃশ্যত এখনও সেখানে ভাইরাসের প্রকোপ বেশ শক্তিশালী। এক্ষেত্রে কি নতুন ধরনের ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?

সারাহ গিলবার্ট: আমরা খেয়াল করে দেখেছি, চীনা ভ্যাকসিন অন্যান্য দেশে ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ ভালো প্রতিরোধ তৈরি করতে সক্ষম। চীনা ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের এক ডোজের সঙ্গে অন্য কোনও প্রযুক্তির বুস্টার ডোজ দিয়ে দেখা যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই অবস্থায় এটিই হতে পারে সর্বোত্তম পদক্ষেপ।

করোনাভাইরাসের একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে বেশিরভাগ জনগণই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে, সেখানে কি নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে?

সারাহ গিলবার্ট: আমার মনে হয় না এটা নিয়ে বড় কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা গেছে যে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে গ্রহীতার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। তাই আমি মনে করি, এই ভ্যাকসিনই অন্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হবে।

নারীদের তুলনায় পুরুষরা কি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল?

সারাহ গিলবার্ট: করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথমদিকে এই ধরনের ধারণা প্রচলিত থাকলেও পরবর্তী সময়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ভাইরাসের নতুন উপধরনের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা কি নতুন ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা ভাবছে?

সারাহ গিলবার্ট: এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তুতকৃত নতুন সিকুয়েন্সটি মূল টিকার তুলনায় বেশি কার্যকর হবে বলে কোনও ভালো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
সারাহ গিলবার্ট
টিকা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বৃহৎ আকারে উৎপাদনের বিষয়টিকে আপনি কি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন?

সারাহ গিলবার্ট: অবশ্যই, এমন ধরনের টিকা আবিষ্কারের কোনও মানেই হয় না যেটি কেবল একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যেই কার্যকর হবে, কিন্তু বাস্তবে বড় পরিসরে যেটার উৎপাদন ব্যয়বহুল। কেউ যদি শুধু প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিয়ে কোন টিকা প্রস্তুত করে, তাহলে ব্যবহারিক দিক দিয়ে সেটি কোনও কাজে নাও আসতে পারে। অথবা বড় পরিসরে সেটি উৎপাদন করা সম্ভব নাও হতে পারে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু ব্যাপক। ডেঙ্গু প্রতিহত করার মতো কোনও টিকা উদ্ভাবনের পরিকল্পনা আছে?

সারাহ গিলবার্ট: এরকম কিছু নিয়ে আমি কাজ করছি না। তবে আমার আগের কিছু সহকর্মী এরকম টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছিলেন, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনই মোকাবিলা করতে পারবে। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে আমরা সেটি দেখতে পারবো।

অদূর ভবিষ্যতে নতুন কোনও মহামারির পূর্বাভাস রয়েছে?

সারাহ গিলবার্ট: মহামারি তো সবসময়ই থাকবে, কিন্তু আগের চেয়ে মহামারির আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ, সচরাচর সংস্পর্শে না আসা, এমন বন্যপ্রাণীর দেহে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস রয়েছে। আবার বনাঞ্চল হ্রাস এবং দ্রুত নগরায়ণের ফলে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শ বেড়েছে। এসব ভাইরাস যদি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তাহলে হয়তো বেশিরভাগ ভাইরাস আক্রান্ত হলে কিছুই হবে না, কিন্তু ছোট একটা অংশ একটি প্রকোপ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হতে পারে।

বাংলাদেশকে টিকা উদ্ভাবনের একটি নতুন সম্মুখভাগ হিসেবে বিবেচনা সুযোগ কি আছে?

সারাহ গিলবার্ট: আমার যা জেনেছি তা হলো ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রযুক্তি একাধিক স্থানে স্থানান্তর সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করতে আমি আগ্রহী। আমি দেখতে চাই তাদের কী প্রয়োজন। যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ সম্ভব।

/এটি/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মশার তো জেট ইঞ্জিন নেই!
বলে নজর রাখো: গর্ডন গ্রিনিজ
সাক্ষাৎকারলেখালেখির আনন্দ হলো ভাষার নানা সম্ভাবনা: আবদুলরাজাক গুরনাহ
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা