X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানি নিয়ে কখনও শত্রুতা করিনি: তাকসিম এ খান

রিয়াদ তালুকদার
১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:০০আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:১০

প্রায় ছয় দশক ধরে রাজধানী ঢাকাবাসীকে পানি সরবরাহের কাজ করছে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ঢাকা ওয়াসা)। গেলো প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জের ধরে তিনি রয়েছেন তুমুল আলোচনায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও তিনি নিজেকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বলে দাবি করছেন। তার ভাষ্য, দীর্ঘ এই সময়ে তিনি ঢাকাবাসীর কাছে ‘পানি বন্ধু’ হয়ে না উঠলেও নিজের দায়িত্বটা ঠিকঠাকই পালন করেছেন। পানি নিয়ে কখনও শত্রুতা করেননি। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজারে ঢাকা ওয়াসায় তার নিজস্ব কার্যালয় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যে লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্বে এসেছিলেন, সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন?

তাকসিম এ খান: যদি কয়েকটা পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলি, আল্লাহর অনেক রহমত যে— ঢাকা ওয়াসার জন্য আমরা যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছিলাম, বহুলাংশেই সেগুলো করতে পেরেছি। তবে এগুলো করতে গিয়ে যতটুকু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে আমি ভেবেছিলাম, তারচেয়ে অনেক বেশি ফেইস করতে হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনও সরকারি চাকরি করিনি। আমার লেখাপড়া ছিল বিদেশে। দেশে আমার চাকরি ছিল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। যে কারণে অনেক বিষয় রপ্ত করতে আমার অনেক সময় লেগেছে।

তারপরও যেটা করেছিলাম— প্রথমে এসেই সরকারের সঙ্গে বসেছি। সরকার কী চায়, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। আর সে সময় আমরা যা বুঝেছিলাম সাদামাটা কথায়— বর্তমান সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার পরিবর্তন চায়। বিশেষ করে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বর্তমান সরকারের একটি বিশেষ কনসার্ন রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সব বিষয়ে কনসার্ন, শুধু পানি ব্যবস্থা নয়, সব বিষয়েই তিনি কনসার্ন।’

বাংলা ট্রিবিউন: দায়িত্ব পালনে তাহলে আপনি নিজেকে সফল মনে করছেন?

তাকসিম এ খান: আল্লাহর রহমত অনেক কঠিন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। পানি ব্যবস্থাপনার এই আমূল পরিবর্তনটা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এবং নির্দেশনায়। সেই অনুযায়ীই আমরা কাজগুলো করার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কতটুকু সফল হয়েছি, যদি এ কথা বলেন তাহলে বলবো, অনেক সফলতা রয়েছে। ২০০৮ সালে ঢাকায় মোট জনসংখ্যার বসবাসকারী তাদের মধ্যে ৬০ পার্সেন্ট মানুষ পানি পেতো। আজকে ১০০ শতাংশ মানুষ পানি পাচ্ছে। ২০০৮ সালে লোক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০২৩ সালে এসে লোক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটির বেশি। ১৫ বছরে ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন একশতভাগ মানুষ পানি পাচ্ছে।

আগে জনসংখ্যা কম থাকলেও ৪০ ভাগ মানুষ পানি পেতো না। পানির হাহাকার লেগেই থাকতো। পানির জন্য ঝাড়ু মিছিল একটি নরমাল ছিল। এমনকি এই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য তখনকার সময় সেনাবাহিনীকেও তলব করতে হয়েছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: বর্তমানে ঢাকাবাসী যে পানি পাচ্ছে, তার কোয়ালিটি কতটুকু মানসম্পন্ন?

তাকসিম এ খান: আগে পানির কোয়ালিটি নিয়ে কোনও কথাই ছিল না। বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ...। যদি পরিসংখ্যানের দিক থেকে বলা হয়, হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার কারণেও আমাদের করতে হয়েছে। ৯৫ শতাংশ এলাকায় আমাদের পানি শতভাগ সুপেয়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা পাওয়া গিয়েছিল, এখনও কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে। কারণ আমাদের পাইপলাইনের সমস্যা রয়েছে। তবে আমরা পাইপলাইন পরিবর্তন করছি। নতুন সিস্টেমের দিকে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: সম্প্রতি আপনাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। আপনাকে নিয়েই কেন বারবার নেতিবাচক তথ্য আসে?

তাকসিম এ খান: গত ১৩ বছর ধরে একটি গোষ্ঠী বা চক্র বলে আসছে, অমুক প্রজেক্টে দুর্নীতি, তমুক প্রজেক্টে দুর্নীতি। যত তথ্য প্রকাশ হয়েছে বা অভিযোগ এসেছে; সব কিছু মিথ্যা, সবই ভুয়া। আপনি তো অভিযোগ এবং দুর্নীতির কথা বলছেন, দুদক অভিযোগ নিচ্ছে ভালো কথা। সরকারের মিনিস্ট্রিও এসব অভিযোগ নিচ্ছে, তারা  তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো তদন্ত করে কোনও অভিযোগের প্রমাণ করতে পারেনি। যেহেতু কোনও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাহলে বলাই যায় কোনও দুর্নীতি হয়নি। আর ছোটখাটো যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, কর্মকর্তা বা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একাধারে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনও প্রমাণ দিতে পারছে না। অভিযোগ আসতে পারে কিন্তু অভিযোগের প্রমাণ করা হলে সে অভিযোগের বাস্তবতা সম্পর্কে জানা সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: দীর্ঘ ১৪ বছর আপনি টানা ওয়াসার এমডি। আপনি নিজেই বলছেন, এই সময়ে আপনার অনেক সাকসেস রয়েছে। তাহলে কারা আপনার সঙ্গে শত্রুতা করছে বলে মনে করেন?

তাকসিম এ খান: বর্তমান সরকারের সাকসেস কি সবাই চায়? বেশিরভাগ লোক চায়, কিন্তু সবাই চায় না। আগে ৬০ শতাংশ মানুষ পানি পেতো, ৪০ শতাংশ পেতো না। মানুষ হাহাকার করেছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী খুশি ছিল, তারা দুঃখ করতো না, কেন খুশি ছিল তারা? তাদের নিশ্চয়ই রাজনৈতিক কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল। ৪০ শতাংশ পানি মানুষ পেতো না, সেই ৪০ শতাংশ নিয়ে একটি চক্র ব্যবসা করতো। যে ধরনের অপতৎপরতা চালাতো; সেতো ভালো ছিল সে সময়, তার তো বাড়তি আয় হতো।

নগরবাসীর মধ্যে আমরা শতভাগ পানি সরবরাহ করতে পেরেছি। তখন জনগণ খুশি, সবাই খুশি। এটা সরকারের একটা অর্জন। ৪০ শতাংশ পানি যখন গায়েব ছিল, তখন যারা বেনিফিশিয়ারি ছিল; তারা এখন কি করছে? তারা তো বাড়তি আয় করতে পারছে না। তারা কি এই সরকারকে বলবে, ভালো কাজ করেছেন। তার তো অবৈধ আয়টি বন্ধ হয়ে গেছে। আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা যারা সরকারের নিয়োজিত, আমাদের কি তারা ভালো চোখে দেখবে? তারা তো চেষ্টা করবে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। যাতে তাদের বাড়তি এবং অবৈধ উপার্জনের বিষয়টি চালু থাকে।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকার সবকিছুই ডিজিটাল করার কথা বলছে। আপনি ঢাকা ওয়াসাকে কতটুকু ডিজিটালাইজড করতে সক্ষম হয়েছেন? আর মাঠ পর্যায়ে ডিজিটালাইজড করতে গিয়ে কি কোনও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?

তাকসিম এ খান: ডিজিটালাইজড-এর পথে কাজ করতে গিয়ে বাধা তো রয়েছেই। আগে যে অবৈধ আয়ের পথগুলো ছিল, আমরা সেগুলো বন্ধ করেছি এবং বন্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আর তার জন্যই এ ধরনের রিপারকেশন (প্রতিঘাত)। পানি ব্যবস্থাপনার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকাবাসী আমাকে এজন্য ‘পানি বন্ধু’ না বলুক, তবে শত্রু তো না। এটা তো বলতে পারি, আমি পানির শত্রু না। পানি নিয়ে কখনও শত্রুতা করিনি।

আমরা পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সঠিক দিকনির্দেশনা চেয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা সঠিক পথে রয়েছি। সঠিক পথে থাকলে পানির ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আসবেই। আমরা পানি ব্যবস্থাপনায় শতভাগ না হলেও ৮০ ভাগ কম্পিউটারাইজড বা ডিজিটালাইজড করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ওয়াসায় ম্যানুয়াল কোনও কিছুই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা খুব আনন্দিত যে, আমরা আগে থেকেই স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট শুরু করেছি। আমরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি, স্মার্ট ওয়াসা। যেটা আগে আমরা বলতাম ডিজিটাল ওয়াসা। আমরা একটি স্মার্ট ওয়াসার আন্দোলন করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের জেরে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ বন্ধ রেখে কর্মসূচি পালন করেছেন। বিষয়টি তো ব্যক্তিগত, তাহলে এর সঙ্গে কর্মকর্তারা যুক্ত হলেন কেন?

তাকসিম এ খান: যেহেতু আমরা একটি সরকারি সংস্থা, যে কোনও তথ্য এলেই বা সংবাদ প্রকাশিত হলেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আমরা বিষয়টি জানাই। মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। উনি দেশে ফিরলে ওনার সাথে আলাপ-আলোচনা করে যেটা সঠিক সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত যারা ওয়াসার সামনে অবস্থান করেছে সে বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। তবে একটা কথা বলতে পারি, সবার সবধরনের কথা বলার অধিকার রয়েছে। যিনি বা যারা এটা করেছেন, আমার ১৪টা বাড়ি রয়েছে লিখে দিয়েছেন, সেসব তথ্য ওনার কাছে আছে কিনা তা আমি জানি না। সে প্রতিবেদন যে মিথ্যা, তা বলার রাইটস সবার রয়েছে। সত্য কথা বলার রাইটস সবার রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তাকসিম এ খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য শুভকামনা রইলো।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ঢাকা মহানগরীতে বিনামূল্যে খাবার পানি দেবে ওয়াসা
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক