X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান

‘মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের উদাহরণ হতে পারে ওয়েসিস’

রিয়াদ তালুকদার
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:১৪আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৬:০৮

রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ১ অক্টোবর। সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে, যা সবার জন্যই উন্মুক্ত। মনোমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে ওই বছরেরই ২০ সেপ্টেম্বর থেকে। গত ১৫ এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক রোগী। মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশের এই প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্বে) ও ওয়েসিসের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বাংলা ট্রিবিউন: পুলিশ মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে সাধারণত আইনি ব্যবস্থাই গ্রহণ করে। কিন্তু মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র করার উদ্যোগ কেন নেওয়া হলো?

ওয়েসিসের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবুর রহমান: যারা মাদকাসক্ত কিংবা মাদকের ব্যবসা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনে সুযোগ রয়েছে। তার পাশাপাশি পুলিশের একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ও রয়েছে। সেই সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করেই প্রায় দেড় বছর আগে ওয়েসিস নামক মাদকাসক্ত নিরাময় ও পরামর্শ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি যখন করা হয়, তখন বাংলাদেশের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোর সব বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং বিদেশের মাদক নিরাময় সেন্টার ভিজিট করে সেগুলো নিয়ে এনালাইসিস করে, গবেষণা করে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। যেটি বর্তমানে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের একটি উদাহরণ হতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই নিরাময় কেন্দ্রে কারা চিকিৎসা নিচ্ছেন? এখন পর্যন্ত কতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছেন?

হাবিবুর রহমান: এখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই সমাজের উচ্চবিত্ত ও ধনাঢ্য পরিবারের। তবে তাদের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়। কে কোন পরিবার থেকে এসেছে, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত নাকি অন্য কোথাও থেকে এসেছেন; সেসব বিষয় আমলে নেওয়া হয় না। চিকিৎসক তার চিকিৎসা সেবা অনুযায়ী সবাইকেই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যানগত দিক যদি বলি তাহলে ৯০ ভাগই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি মাদকাসক্তে আসক্ত হয়ে যায়, তাহলে যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমাদের এখানে পাঁচ ক্যাটাগরির প্যাকেজ রয়েছে।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বেডরুম বাংলা ট্রিবিউন: চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখা যায় মাদকাসক্তরা মাদক ছাড়ার পর আবারও আসক্ত হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে আপনাদের পর্যবেক্ষণ কী?

হাবিবুর রহমান: নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা শেষে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে আমরা পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেই। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির এবং পরিবারের খোঁজখবর সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে রাখা হয়। সুস্থ হয়ে সে কী করছে, আবারও কি আগের মতই মাদকে জড়িয়ে পড়েছে কিনা; এসব বিষয়েও আমরা খোঁজখবর রাখি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন কিনা, নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে কিনা; এসব বিষয়েও তদারকি করা হয়। নিজেদের তাগিদেই ফলোআপ করা হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: মাদকাসক্ত রোগীরা মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন। যেহেতু ওয়েসিস শুধু নিরাময় কেন্দ্র না, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রও। এখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

হাবিবুর রহমান: ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে শুরু থেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দেখা হচ্ছে। আমরা নির্মাণের সময়ই বিষয়টি যে মাথায় রেখেছি, একটা উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরতে পারি। আমাদের এখানে ফ্যানগুলো কিন্তু বিশেষভাবে স্থাপন করা। এসব ফ্যানে ২০ কেজির বেশি ভর দিলেই তা খুলে পড়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা মাদকাসক্ত তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। সেই ঘটনা যেন সংঘটিত হতে না পারে সেকারণেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম সব বিষয়ে গবেষণা করেই ওয়েসিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে শুরু থেকেই।

রয়েছে খেলাধুলার ব্যবস্থা

বাংলা ট্রিবিউন: ওয়েসিসের চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন, আপনারা মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কীভাবে চিকিৎসা সহায়তায় দেন?

হাবিবুর রহমান: এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে থাকার সবকিছুই ৫ তারকা হোটেলের মানের। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে চিকিৎসার যে ব্যবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। বিদেশের নিরাময় কেন্দ্র গুলোর পর্যালোচনা করে আমরা এই নিরাময় কেন্দ্রের সব বিষয়গুলো সাজিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য যারা চিকিৎসক, তারা তো রয়েছেনই। দেশের বরেণ্য চিকিৎসকরা রয়েছেন তারাও এখানে ভিজিটিং চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

মাদকাসক্ত থেকে মুক্তির জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে ইনডোর বিভিন্ন ধরনের গেমস রয়েছে টিভি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। যে যে ধর্মের হোক না কেন সে সংশ্লিষ্ট বই এবং কিতাব এখানে সংরক্ষিত রয়েছে তারা সেগুলো পড়ছেন সময় কাটাচ্ছেন। লাইব্রেরি রয়েছে ব্যয়ামাগার রয়েছে। ইয়োগা করানো হয়। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। নারীদের উপযোগী সবধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আলাদা একটি ফ্লোর রাখা হয়েছে।

মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক যে সমস্যার কারণেই হোক— যারা এই ওয়েসিসে এসে ভর্তি হন, প্রথমেই তাদের সমস্যার কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়। আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, মানসিক চিকিৎসক রয়েছেন। মাদকাসক্ত এবং মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং সবচেয়ে বড় বিষয়। কাউন্সেলিংয়ের জন্যও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। শুধু মাদকাসক্ত ব্যক্তি নয়, গ্রুপ কাউন্সেলিং এমনকি মাদকাসক্ত পরিবারের সদস্যদেরও কাউন্সেলিং করা হয়ে থাকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে।

ওয়েসিসে আছে জিমের ব্যবস্থাও বাংলা ট্রিবিউন: মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরাও কি এখানে চিকিৎসা নিতে পারেন?

হাবিবুর রহমান: বাংলাদেশ পুলিশ মাদকাসক্ত কিংবা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে থাকে। কারও বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা কিংবা মাদকাসক্তের অভিযোগ উঠলে, তদন্ত করে সেটার সত্যতা মিললে তাদের চাকরি থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ওয়েসিসে তাদের চিকিৎসার কোনও সুযোগ নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে কতটুকু সহায়তা পাওয়া যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে আনতে কোনও প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় কিনা?

হাবিবুর রহমান: একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি আমাদের ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্র আসলে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মাদক নেওয়ার কারণে শারীরিক অন্য কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা, সেসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে করে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

খাবার-দাবারের বিষয়েও পুষ্টিবিদদের সহায়তা নেওয়া হয়। যে কোনও মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পুলিশের সহায়তায় নিয়ে আসতে হয়। স্বেচ্ছায় আসতে চায় না, পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা রয়েছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত একটি টিম মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।

নারীদের জন্য আলাদা ফ্লোর বাংলা ট্রিবিউন: ওয়েসিস নিয়ে কি পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আর কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে?

হাবিবুর রহমান: ওয়েসিস নিরাময় কেন্দ্রের পরিসর বাড়িয়ে মানিকগঞ্জেও আরেকটি বড় পরিসরে নিরাময় কেন্দ্র তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর তীরে নির্মাণ হচ্ছে এটি। সেখানে স্থায়ী একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র তৈরি হবে। সেটি হবে একটি রিসোর্ট আকারে। বাড়তি সুবিধা হিসেবে খোলামেলা পরিবেশ, নৌভ্রমণ, সুইমিং পুল, খেলাধুলার ব্যবস্থা, সবমিলিয়ে এটি হবে একটি মিনি ভিলেজ। এটি নির্মিত হলে উপমহাদেশের একটি অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হবে এই নিরাময় কেন্দ্রটি। এই নির্মাণ কেন্দ্রটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে একটু সময় লাগবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ধন্যবাদ আপনাকে।

হাবিবুর রহমান: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী